শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি, প্রেসিডেন্টের বাড়ি ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১, ২০২২, ০৯:২৮ পিএম

শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি, প্রেসিডেন্টের বাড়ি ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ

বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি সহিংস আকার ধারণ করে

বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনের প্রতিবাদ কর্মসূচি সহিংস আকার ধারণ করে। ছবির উৎস, EPA

দেশে খাদ্য, তেল ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটের প্রতিবাদে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভের পর কারফিউ জারি করেছে দেশটির পুলিশ। বিক্ষোভকালে সহিংসতা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসও ছুড়েছে। 

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এ ঘটনাকে 'চরমপন্থীদের কাজ' বলে উল্লেখ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় এখন বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে।

দিনে তের ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ না থাকা, তেল, খাদ্য পণ্য ও ঔষধ সংকটের কারণে দেশটিতে জন অসন্তোষ চরমে উঠেছে। তবে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনের প্রতিবাদ কর্মসূচিটি শুরুতে শান্তিপূর্ণই ছিল বলে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জল কামান নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করলে সেটি সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে।

শুক্রবার সকালেও পুলিশ ৪৫ জনকে আটক করেছে। এ বিক্ষোভকে একটি বড় ধরনের সরকার বিরোধী মনোভাবে বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও ২০১৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মিস্টার রাজাপাকসে। তিনি তখন স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়ভাবে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে সমালোচকরা এ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন।

কারণ প্রেসিডেন্টের ভাই ও ভাতিজারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে আছেন। এটিকেই দেশটির বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলছেন অনেকে।

এখন খবর বেরিয়েছে যে দেশজুড়ে মানুষ বিদ্যুৎ না পেলেও প্রেসিডেন্ট আর তার মন্ত্রীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও সম্পদশালী, যা মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সরকার অবশ্য বলছে যে করোনা মহামারির কারণে পর্যটন খাত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালে চার্চগুলোতে সিরিজ হামলার ঘটনাও পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

Protests outside Sri Lanka President's home as economic crisis deepens |  World News - Hindustan Times

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংকটের শুরু অনেক আগে থেকেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জায়াদেবা উয়ানগোদা বিবিসিকে বলেছেন, যে কয়েক দশক ধরেই ধীরে ধীরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং কেউ এর দায় নেয়নি।

"তবে অবশ্যই বর্তমান সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতাই এর জন্য সরাসরি দায়ী," বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ভিএ ভিজেওয়ার্দানা বলেছেন, ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসানের পর শ্রীলংকা কিছু মৌলিক ভুল করেছে।

২০০০ সালে জিডিপির ৩৩ শতাংশ আসতো রপ্তানি থেকে। যেটা এখন বার শতাংশে নেমে এসেছে, বলছিলেন তিনি। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কান রুপির অবনমন না করাতেও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে যায়।

২০১৯ সালের শেষের দিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের মতো থাকলেও এখন তা দুই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য আছে মাত্র তিনশ মিলিয়ন ডলার।

এমনকি আমদানিনির্ভর দেশটির জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল প্রবাহও নেই। শ্রীলঙ্কার হাতে এখন আর তেলের মতো জরুরি দরকারি পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত ডলার নেই। এর ফলে আরো বেশি সময় ধরেই সেখানকার মানুষজনকে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। সামনের দিনগুলোতে এটি ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা।

তেলের পাম্পগুলোতে লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। এমনকি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানের সামনেও দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন। গত সপ্তাহে এসব লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ জন বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশ থেকেই খাদ্য ও ঔষধ সংকটের খবর আসছে।

Link copied!