শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি। এক সময় কাজ করতেন পুলিশ আর ডিবির ইনফরমার হিসেবে।সেখান থেকেই তিনি খুব কাজ থেকে শিখেন ডিবি বা পুলিশ কীভাবে আসামি ধরে। আসামি গ্রেফতারের সময় কি কি সরঞ্জাম থাকে, সেই একই রকম জিনিসপত্র নিয়ে ২০১২ সালে গড়ে তুলেন ডাকাত দল। প্রায় এক যুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করেছে তার দল। এখন পর্যন্ত ৭টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, শহিদ মাঝি এক সময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালে তিনি ডাকাত দল তৈরি করেন। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। আমরা ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের নাম পরিচয় পেয়েছি, তাদেরও গ্রেফতার চেষ্টা চলছে।
ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলার তদন্তে শহিদ মাঝি ও তার দলের সদস্যদের গ্রেফতার করি। এই মামলার তদন্তকালে ৩০০ ফিট অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরেকটি গ্রুপের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।দুটি ডাকাত দলই একে অপরের পরিচিত। আমরা তৃতীয় আরেকটি দলের সন্ধানও পেয়েছি।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি অরফে শহীদ মাঝি, শ্রী সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার, মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম, মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলাম, মো. খলিলুর রহমান, মো. আকরাম হোসেন, দ্বীন ইসলাম অরফে কাউছার আহম্মেদ, ইলিয়াছ আহম্মেদ অরফে নিরব, ফরহাদ আলী, রিয়াজ হোসেন হাওলাদার অরফে রিয়াজুল, শফিকুল ইসলাম লিটন, সেরাজুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম পিন্টু।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল, ১টি মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, ১৭ জুন আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি ১৩ লাখ টাকা নিয়ে খিলক্ষেতে তার বাসায় যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেল যোগে রাত ৮টার দিকে জিয়া কলোনী এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জন মাইক্রোবাসে এসে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর ডিবির পোশাক পরা অবস্থায় এবং ডিবি পরিচয়ে আজিজকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়। তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে এলোপাথাড়িভাবে মারধর করে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে তার সাথে থাকা কাঁধ ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা, ৩টি মোবাইল এবং বিকাশের এজেন্ট নম্বর থেকে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে রাত ১০টার দিকে রূপগঞ্জের চরপাড়া সাকিনস্থ রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে যায়।
এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আজিজ। পরে ডিবি গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম ঘটনা তদন্ত করে ডাকাত দলটিকে শনাক্ত করে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ডিবি জানিয়েছে, ডিবি পরিচয় দেওয়া ডাকাত দলের সদস্যরা মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি ও গুলশান এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংকের গ্রাহকদের টার্গেট করে। এরপর কেউ টাকা উঠালে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে তাদের পিছু নেয়। পথে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের আরেক টিম প্রস্তুত থাকে। মোটরসাইকেল টিমের তথ্যমতে— সুবিধাজনক জায়গায় মাইক্রোবাস এসে টার্গেটকে গতিরোধ করে। পরে ভিকটিমকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং তার কাছে থাকা সব কিছু লুট করে নেয়। কাজ শেষে ভিকটিমকে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়।