করোনা মহামারির মতো ভয়াবহ বিশ্ব দুর্যোগে গোটা দুনিয়ার বাঘা বাঘা দেশ যেখানে নাকানি চুবানি খেয়েছে এবং খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল দেশ পরিস্থিতি দারুনভাবে সামলে নিয়েছে। শুধু পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে বললে কমই বলা হয়। বাংলাদেশ মহামারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সারাদেশে করোনার গণটিকাদানের মহাযজ্ঞ চলছে, সেটিও বহির্বিশ্বের নজর কেড়েছে। উপরন্তু পরিকল্পিত লকডাউন,আবার সেটা তুলে দিয়ে কড়া বিধিনিষেধ বজায় রেখে সীমিত পরিসরে দোকানপাট চালু,এরপর বৃহত্তর পরিসরে সকল বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চালুর মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাও সচল রেখেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের এমন সাফল্য বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। এটা মানতেই হবে যে, মহামারি জেঁকে বসার আগেভাগেই এসব সিদ্ধান্ত না নিলে একদিকে বেশি প্রাণহানি এবং অন্যদিকে আর্থিক বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতো আমাদের। সেটা অন্তত হয়নি।
সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। তিনি হয়ত আন্দাজ করতে পেরেছিলেন, করোনা পরিস্থিতির সহসাই সমাধান মিলছে না। সামনের দিনগুলোতে এই মহামারির কুফল কেমন হতে পারে, তিনি হয়ত সেটি নিয়েও ভাবছেন এখন।গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস যখন এ দেশে প্রথম সনাক্ত হয়, জনমনে নিদারুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। তখন মানুষের আতঙ্ক কাটানোর জন্য এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু কৌশল নিয়েছিল সরকার যা তাদেরকে ত্বরিৎ সাফল্য এনে দিয়েছে।
এরমধ্যে বড় যে পদক্ষেপটি ছিল, সেটি হল তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক হাজার নার্স ও ডাক্তার নিয়োগ প্রদান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা মোকাবিলায় মাত্র ১৫ দিনে ২০০০ ডাক্তার ও ৫০০০ হাজার নার্স তখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ এরকম একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আমাদের দেশে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। এটি সম্ভব হয়েছে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শীতার কারণে।
এরপরই সরকার টিকা কিনে রাখার সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখে। মহামারি ছড়িূয়ে পড়ার পর গোটা বিশ্বে কী হবে, সেটিই বোধ করি অনুমান করতে পেরেছিলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এ কারণেই কয়েক কোটি টিকা কিনে রাখার সিদ্ধান্ত তিনি নিয়ে রেখেছিলেন আগেভাগেই। এ জন্য বাজেট থেকে বড় অঙ্কের একটি অর্থও তিনি টিকা কেনার জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন। তখন এমন সিদ্ধান্তে অনেকের মনে দ্বিধা কাজ করলেও, এখন সবাই তার এমন সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছেন। এমনকি বিশ্বনেতারাও শেখ হাসিনার করোনার বিরুদ্ধে এমন লড়াইয়ের ভূমিকার প্রশংসা করছেন।
সরকার শুধু রাজধানী নয়, প্রতিটি উপজেলার হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে। এসব হাসপাতাল এখন করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমন দুর্যোগে চিকিৎসা এবং টিকা প্রদানই শুধু নয়, সরকার তার নিজ দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে কোটি পরিবারে ত্রাণ সহায়তাও পৌঁছে দিয়েছে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলায় যেমনটা ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি তার দল আওয়ামী লীগকেও তিনি সমানতালে ব্যবহার করেছেন। দলের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তাদের অনেকে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারাও গেছেন।
লকডাউনের শুরু থেকেই মানুষকে ঘরমুখী করতে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কাজ করা শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার সঙ্গে কোন কাজটি কখন করতে হবে, বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে সব কিছু স্টাডি করে তিনি বার বার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন, অনলাইন মাধ্যমের সুবাদে এসব কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। যার ফলে জেলা-উপজেলার মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এগিয়ে এসেছেন। মহামারিতে মারা যাওয়া লোকজনের দাফন-সৎকার থেকে শুরু করে ত্রাণ কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা করে গেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা সাধারণ ছুটির মধ্যেও আন্তরিকতার সঙ্গে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ থেকে শুরু করে সব ধরণেরর কর্মকাণ্ড করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন।
সরকারের কাজের সমালোচনা করার মত অনেক বিষয়ই আছে। প্রশংসা করার মতও তাদের অনেক বিষয় আছে। বোধ করি করোনা মহামারীতে সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাতে প্রশংসার পাল্লাই ভারী। যে কারণে বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে মনে করছে।
ফলে করোনাকালে বাংলাদেশ সরকার তথা সরকার প্রধান শেখ হাসিনার এসব দূরদর্শী কর্মকাণ্ড আমাদের আশাবাদী করে। বাংলাদেশ শুধু করোনা মহামারি নয়, ভবিষ্যতের শত বাধাও এভাবে অবলীলায় মোকাবিলা করে জয়ী হবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের।
লেখক: সম্পাদক, দ্য রিপোর্ট | ইমেইল: lutforrahmanhimel@gmail.com