জুন ১৮, ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
একদিনের ‘বয়কট’ শেষে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ফেরার পর হাসিমুখে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
কেউ কেউ তাদের সঙ্গে করমর্দন করেছেন, কেউবা বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করেছেন।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে সাধুবাদ জানিয়েছে জামায়াত।
তবে বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গতকাল মঙ্গলবারের দ্বিতীয় ধাপের মুলতবি সভা প্রতীকী বয়কট করেছিলেন বলে জানিয়েছেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান মোহাম্মদ তাহের।
বুধবার, ১৮ জুন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের মুলতবি অধিবেশনের দুপুরের বিরতিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মোহাম্মদ তাহের।
প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে হওয়া বৈঠকের যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। প্রতিবাদস্বরূপ তারা গতকালের সংলাপে যোগ দেননি। তবে আজ দলটির প্রতিনিধিরা সংলাপে যোগ দেন।
এ বিষয়ে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলাম। সেটা আমাদের দলীয় অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছেন পুরস্কার আনার জন্য, টাকা ফেরত আনার জন্য। উনার উপস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়েও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বলেছিলেন। সেটিও আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু ভালো হতো দেশে এসে আলোচনা করে তারিখের বিষয়ে পুনরায় বললে। কিন্তু সেটা করেননি।’
যৌথ বিবৃতিকে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা উল্লেখ করে তাহের বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন দেশে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারীদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি হয়। এখানে দেশে এক শর বেশি দল আছে। তাহলে তো দেশে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হবে, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, একটা যৌথ বিবৃতি দিতে হবে। এটা নজিরবিহীন, প্রপার ছিল না। এতে অন্যান্য দল বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে আমাদের আপত্তি। বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
তাহের বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে সংস্কার কমিশন খুব এগোতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মূষিক প্রসব হয়ে দাঁড়াবে। সে কারণে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গতকাল আসিনি।’
গতকাল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন উল্লেখ করে তাহের বলেন, ‘গতকাল দুপুরে পরে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, উনার সরকার নিরপেক্ষ, উনারা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ঝুঁকে নেই। আগামী দিনে এসব ব্যাপারে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন এবং যত্নবান হবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকের বৈঠকে এসেছি।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা কিছুতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হোক তা চাই না। সরকারকে সহযোগিতা করেছি সব সময়। কিন্তু ব্যত্যয় হলে কথা বলতে হবে।’