নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০১:৩৪ পিএম
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবু রহমান এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা; তাদের নিজ নিজ ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র ক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এসব কথা বলেন।
পোস্টে তিনি উল্লেখ (ইংরেজি থেকে অনূদিত) করেন, “পতিত শেখরা!
শেখ মুজিব এবং তার কন্যা (আরেকজন শেখ) তাদের নিজ নিজ ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্য জনগণের তীব্র রাগ ও ক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছেন। পার্থক্য শুধু এটুকুই যে, শেখ মুজিব একসময় পূর্ববঙ্গের গণমানুষের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। পাকিস্তানি অত্যাচার থেকে বাঁচতে জনগণ তার নেতৃত্ব অনুসরণ করেছিল, কিন্তু ১৯৭১-এর পর তিনি নিজেই একজন অত্যাচারী হয়ে ওঠেন। তার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য একাত্তরের পর বাংলাদেশ পঙ্গু ও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তার এমন ফ্যাসিবাদী ভূমিকার কারণে মানুষ ১৯৭৫ সালে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেনি।
তবে, শেখ তার ৭১-এর পূর্বের ভূমিকার জন্য সম্মান পাবেন যদি তার দল এবং পরিবারের সদস্যরা তার একাত্তর পরবর্তী গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ এবং স্পষ্টতই বাহাত্তরের সংবিধানের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চান, যা বাকশালের পথ প্রশস্ত করেছিল। তাদের উচিত শেখের মেয়ের (শেখ হাসিনা) ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা স্বীকার করা, ক্ষমা চাওয়া এবং বিচারের মুখোমুখি হওয়া (শেখ মুজিবকে একজন ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়েছিলেন তিনি)। তাদের উচিত মুজিববাদী রাজনীতি এবং শেখ পরিবারের মূর্তিপূজাও পরিত্যাগ করা।
কন্যার ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে শেখের ছবি সরানো হয়েছে (কর্মকর্তারা সরিয়েছেন, যদিও তা হয়েছে); যে শাসন মেয়ে করেছেন ফ্যাসিবাদী বাবার নামে ও তার একাত্তর-পরবর্তী চেতনার কথা বলে। তার বাবাকে দেবতায় ভূষিত করা হয়েছিল, কিন্তু জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর বাংলাদেশের জনগণ তাদের ছবি, ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য উভয়ই পুরোপুরি নামিয়ে এনেছিল।
কেউ যদি সরকারি অফিস থেকে শেখদের ছবি সরানোর কারণে আক্ষেপ প্রকাশ করেন, তবে তিনি এ গণ-অভ্যুত্থান ও গণমানুষের চেতনারই নিন্দা জানালেন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরা এখানে এসেছি, ঐতিহাসিক অসংগতি ও অপব্যাখ্যাগুলো দূর করতে। মনে রাখতে হবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের গণমানুষের। আবার, কোনো মুক্তিযোদ্ধাও যদি একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাঁর বিচার ও সাজা হওয়া উচিত।
স্বাধীনতাযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তাঁদের (একাত্তরের পর কোনো অন্যায় করা মুক্তিযোদ্ধাদের) এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের উচিত, শাসক পরিবারগুলোকে দেবতুল্য করা ও সেই ক্ষমতাসীন পরিবারগুলোর সবকিছু নিজেদের বলে মনে করা-এ থেকে বেরিয়ে আসা। ’৪৭ ও ’৭১-এর পাশাপাশি জুলাইয়ের চেতনা আমাদের সবার স্মৃতিতে থাকুক অম্লান!”