ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে খোশমেজাজে দেখা যায়। রিমান্ড শুনানির পর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ওবায়দুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলককে আজ চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পলকের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, এ নিয়ে তার মক্কেলের মোট ৬২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলো। খবর প্রথম আলো।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের নয় দিন পর গ্রেপ্তার হন পলক। এরপর তাকে অনেকবার ঢাকার বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়। বেশির ভাগ সময় তাকে বিমর্ষ দেখা যায়। তবে আজ ছিল ব্যতিক্রম।
আদালতের কাঠগড়ায় তোলার পরপরই পলক হাস্যোজ্জ্বলমুখে কথা বলতে থাকেন সবার সঙ্গে। রিমান্ড শুনানি শেষ হলে তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেন। একপর্যায়ে পলক তার আইনজীবীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। পরে তিনি আদালতকক্ষে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘ঈদ মোবারক।’
এদিকে আজ সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএমএম আদালতের হাজতখানার সামনে আসেন। এই দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশের পর আদালতের হাজতখানার প্রধান ফটক খুলে যায়।
হাজতখানার ভেতর থেকে প্রথমে বের হন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার পিছু পিছু যথাক্রমে বের হন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, পলক ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
কামরুলের পেছনে দুই হাত, এক হাতে হাতকড়া পরানো। বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে তিনি হাঁটতে থাকেন। আতিকুলের পেছনে দুই হাত, দুই হাতেই হাতকড়া। পলকের দুই হাত পেছনে, পরানো হাতকড়া। কামাল মজুমদারকে দেখা যায়, তার দুই হাত সামনে। এক হাতে হাতকড়া পরানো। তারা মাথা নিচু করে হাঁটছিলেন।
কামরুল, আতিকুল, পলক, কামাল মজুমদারদের আদালতের সামনের সড়ক দিয়ে হাঁটিয়ে আদালত ভবনের সিঁড়ির কাছে নেওয়া হয়। এরপর তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে একতলা থেকে দুই তলায় যান। এরপর একে একে তাঁদের আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়।
কাঠগড়ায় ওঠার পর কামরুল, আতিকুল ও পলক তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় পলককে খোশমেজাজে দেখা যায়।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পৃথক হত্যা মামলায় কামরুল, আতিকুল ও কামাল মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এরপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা পলকের নাম ধরে ডাকেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওবায়দুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে ৫ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ওবায়দুল নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় পলকের নাম রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘জুনায়েদ আহমেদ পলক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একজন অন্যতম সহযোগী। জুলাই-আগস্টে দুই হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সঙ্গে আসামি পলক জড়িত।’
তবে পলকে আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রিমান্ড আবেদন বাতিল চান। তিনি তার মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে পলককে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।
তখন সকাল ১০টা ২৫ মিনিট। বিচারক এজলাস ত্যাগ করেছেন। আদালতকক্ষে উপস্থিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। আরও উপস্থিত পুলিশের অনেক সদস্য।
কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আতিকুলের দুই হাত পেছনে নিয়ে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে দিচ্ছিল। আরেকজন পুলিশসদস্য কামরুলের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিচ্ছিলেন।
তখন পলক তার আইনজীবী ফারজানার সঙ্গে কথা বলছিলেন। আইনজীবীর কাছ থেকে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে আইনজীবীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান পলক। পরে আদালতকক্ষে থাকা প্রত্যেকের উদ্দেশে পলক উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন, ‘ঈদ মোবারক।’
ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর পর পলকের দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ। মাথায় পরিয়ে দেয় হেলমেট।
এরপর কামরুল, আতিকুল, কামাল আহমেদ ও পলককে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে আদালতকক্ষের সামনে আনা হয়। পরে তাঁদের আবার আদালতকক্ষ থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।