বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কে কোথায়?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৮, ২০২৪, ১১:৪৪ এএম

বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কে কোথায়?

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ৩৬ দিন স্থায়ী হওয়া এই গণআন্দোলনের শেষ মুহূর্তগুলো ছিল নাটকীয় ও ঘটনাবহুল। ৫ আগস্ট দুপুরের পর সরকার পতনের ঘোষণা আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সবখানেই ছিল সরকারি নিয়ন্ত্রণ। দলের নেতাকর্মীরা সরকার পতনের সেই মুহূর্ত সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারেননি। বঙ্গভবনে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর ও দেশ ছাড়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ৪৫ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।

ছোট বোন শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা যখন সামরিক হেলিকপ্টারযোগে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন, তখনই সেখান থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে আগারগাঁওয়ে জনস্রোত ছিল। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর প্রকাশ হতেই কিছু সময়ের মধ্যেই গণভবন, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা গণআন্দোলনে বিজয়ী ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায়। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও জ্যেষ্ঠ নেতারা কে কোথায় রয়েছেন- এটা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

তবে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের আগেই অনেক মন্ত্রী-এমপি বিদেশে চলে যান। এই তালিকায় রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যও। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এখন আর দেশে অবস্থান করছেন না বলে জানা গেছে।

৫ আগস্ট দুপুরে তড়িঘড়ি করে একটি সামরিক হেলিকপ্টারযোগে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ওই সময় সামরিক হেলিকপ্টারটিতে তারা দুজন ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কোনও সদস্য ছিলেন না। এ ছাড়া শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত রয়েছেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দিল্লিতে গেলে তাদের সঙ্গে হাসিনা-কন্যার সাক্ষাৎ হয়। লন্ডনে বসবাস করা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী হিসেবে আলোচিত। পাশাপাশি শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের দুই দিন আগেই সিঙ্গাপুর চলে যান। ৩ জুলাই রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন তিনি। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই আওয়ামী যুব লীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ দেশে নাকি বিদেশে আছেন- সেটা নিয়ে সংগঠনের কারও জানা নেই। তবে গতকাল যুবলীগের একজন নেতা জানান, ফজলে শামস পরশও দেশে নেই। আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে গেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমও দেশে নাকি বিদেশে সেটা নিয়ে ধূম্রজাল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশ ছেড়ে যেতে সক্ষম হননি তিনি।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শুরুর সময়েই ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। আজমীর শরীফ ভ্রমণে যাবেন এমনটা বলে দেশ ছাড়েন তিনি। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

এদিকে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন বাগেরহাট-১ অসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল। তবে তিনি দেশ ছাড়লেও তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে এবং এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন সেটা স্পষ্ট নয়।

Link copied!