বাংলাদেশের সুস্থধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মুহম্মদ খসরুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি)। ২০১৯ সালের এ দিনে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসি ইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মুহম্মদ খসরু ভারতের হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ঢাকার কেরাণীগঞ্জে। তিনি দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রাতিষ্ঠাণিক শিক্ষার বাইরে তাঁর পড়ালেখা ছিল অগাধ। কখনও তিনি লেখক ও সম্পাদক, আবার কখনও তিনি দক্ষ সংগঠক ছিলেন।
১৯৬৩ সালে ’পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মুহম্মদ খসরু বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’ ও ‘চলচ্চিত্র’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। সৎ, শুদ্ধ ও নির্মল চলচ্চিত্র প্রর্দশণিীর আয়োজন, আলোচনা-সমালোচনা করা, চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ ও প্রচার তৈরির যে সূত্রপাত হয়েছিল,তার ধারাবাহিকতা তিনি ধরে রেখেছিলেন।
খসরু উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন যা ধ্রুপদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে সাক্ষাৎকারটি উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রন হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনিস্টিটিউটের প্রশিক্ষক খসরুর উদ্যোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম স্টাডি সেন্টার। এই সংসদের আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি এবং জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে তার যথেষ্ট অবদান ছিল।
১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ‘পালঙ্ক’ ছবিটি নির্মাণের সময় মুহম্মদ খসরু ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রী রাজন তরফদারের সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের প্রবাদতুল্য এই অকৃতদার মানুষটি উৎসাহিত করেছেন দেশের খ্যাতনামা অনেক চলচ্চিত্রকারদের। তারেক মাসুদ তাদের মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর অবদানের জন্য মুহম্মদ খসরু ‘হীরালাল সেন’ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর র্পূতি উপলক্ষে ‘সুর্বণ জয়ন্তি’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ থেকে তাকে আজীবন সম্মামনা-২০১৭ দেওয়া হয়।