গণমানুষের কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৩, ২০২১, ০১:৩৭ পিএম

গণমানুষের কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

‘হায়, জীবন এত ছোট কেনে? এ ভুবনে’-বহুল পরিচিত এই উক্তির সাথে পরিচয় নেই বাংলা সাহিত্যে এমন মানুষ কমই আছে। তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসের একটি বিখ্যাত উক্তি এটি। চৈতালি ঘূর্ণি, জলসাঘর, ধাত্রীদেবতা, গণদেবতা, হাঁসুলিবাকেঁর উপকথা এবং কবিসহ প্রায় ২ ‘শ উপন্যাসের স্রষ্টা তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়  জন্মগ্রহণ করনে ১৮৯৮ সালের ২৩ আগস্ট। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের এক জমিদার পরিবারে তার জন্ম।  শৈশবেই পিতাকে হারিয়ে মা এবং পিসির আদরে লালিতপালিত হন।

১৯১৬ সালে নিজ গ্রামের যাদবলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কোলকাতার সেইন্ট জেভিয়ার্সে আইএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেসময় ভারতজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯২১ সালে প্রায় বছরখানেক কারাবাস করেন। ফলে সে বছরই তিনি পড়ালেখার পাট চুকিয়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে প্রবেশ করে। যোগ দেন কংগ্রেসে। কংগ্রেসের রাজনীতি করাকালীন ১৯৩০ আইন অমান্য  করায় আরো এক বছরের জেল হয় তার। এরপর বীরভূম ছেড়ে ১৯৪০ সালের দিকে তিনি স্থায়ীভাবে কোলকাতার অধিবাসী হন। তার প্রথম গল্প    ‘রসকলি’ প্রকাশিত হয় সেসময়ের বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোলে। এছাড়াও ‘শনিবারের  চিঠি’ এবং প্রবাসী পত্রিকাসহ আরো একাধিক পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হতো। লেখালেখি করলেও রাজনীতি থেকে একেবারে অবসর নেননি। একবার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন।

লেখালেখির জগতে প্রবেশের সময় বেশ কিছু কবিতা লিখলেও তারাশঙ্করের পরিচিতি মূলত কথা সাহিত্যিক হিসেবেই। প্রায় ২ শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কে কেন্দ্র করেও একটি উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। তার লেখা মূলত মানবচরিত্র ও জীবনের নানা রহস্য উঠে আসতো। নিজে জমিদার বংশের সন্তান হলেও নিম্নবর্গের মানুষের জীবনেকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে এবং তার বুঝাপড়া হাজির করেছেন উপন্যাসগুলোতে। কেবল উপন্যাস নয় লিখেছেন বেদে, পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার বাগদী, ডোম ইত্যিাদি অসাধরাণ গল্প। যেগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র অঙ্কিত হয়েছে নিপুনভাবে।

তারাশঙ্করের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে, ‘দুই পুরু ‘, ‘কালিন্দী’, ‘আরোগ্য নিকেতন’ ও ‘জলসাঘরের মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রও। তারাশঙ্কর তার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৪৭), জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৫৬), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৫), পদ্মশ্রী (১৯৬২) এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করনে।

Link copied!