নিলুফার ইয়াসমিনকে ছাড়া ১৮ বছর!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১০, ২০২১, ০৪:৩৫ পিএম

নিলুফার ইয়াসমিনকে ছাড়া ১৮ বছর!

বাংলাদেশে সেরা কন্ঠশিল্পীদের মধ্যে একজন নিলুফার ইয়াসমিন একজন। ২০০৩ সালে ১০ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তাকে ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের ১৮ কেটে গেছে। সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য ২০০৪ সালে ‘একুশে পদক’-এ ভুষিত করা হয় তাকে।

১৯৪৮ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। সংগীতের প্রতি তার আকর্ষণ ছোটবেলা থেকেই ছিলো। তার বাবা তৎকালীন সিভিল সার্ভিস অফিসার হলেও যেকোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। সাথে তার মা হারমোনিয়াম বাজাতেন। তখন থেকেই তার মধ্যে গানের প্রতি ঝোক বাড়তে থাকে। প্রখ্যাত কন্ঠসিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন তার ছোট বোন।  মায়ের কাছে নীলুফার ইয়াসমিনের সঙ্গীতে হাতেখড়ি। বিখ্যাত সব শিল্পীদের গাওয়া গানের রেকর্ড থেকে তার মা গান তুলে গাইতেন এবং তার গাওয়া থেকেই নীলুফার ইয়াসমিন গান শিখে ফেলতেন। তার মা তাকে সবসময় কাজী নজরুল ইসলামের কথা বলতেন। তখন থেকেই নজরুল সংগীতের প্রতি তার আকর্ষণ জন্মে।

নীলুফার ইয়াসমিনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখা শুরু হয় ওস্তাদ পি সি গোমেজ এর কাছে ১৯৬৪ সালে। একাধারে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শেখেন। তারপর উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খানের সুযোগ্য ছাত্রী মীরা ব্যানার্জীর কাছে তালিম নেন। তিনি প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী, নজরুল-সঙ্গীতস্বরলিপিকার ও বিশেষজ্ঞ শেখ লুতফর রহমান ও সুধীন দাসের কাছে নজরুল-সঙ্গীত শিখেছেন। নীলুফার ইয়াসমিন বাংলাদেশ বেতারের ছোটদের অনুষ্ঠান খেলাঘরের মাধ্যমে শিল্পী জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকে আমৃত্যু একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন।

প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, শিল্পী ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬৯ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুজন চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, শুভদা চলচ্চিত্রে কন্ঠপ্রদানের জন্য ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুষ্কার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থার পুরস্কার, সঙ্গীত বিষয়ে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৪ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় একুশে পদক এবং নজরুল সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলা ১৪১০ সনে নজরুল পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন নীলুফার ইয়াসমিন। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের নজরুল সঙ্গীত বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন।

২০০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নীলুফার ইয়াসমিনের টিউমার ধরা পড়ে। অপারেশনের পর তিনি আবার ফিরে এসেছিলেন সঙ্গীতভুবনে। কিন্তু ২০০৩ সালের ১০ই মার্চ বারডেম হাসপাতালে তিনি সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

Link copied!