শুভ জন্মদিন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদ। জন্মদিনের আড়ম্বরতা পছন্দ ছিল না তাঁর। তবু রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, সুহূদদের নিয়ে কাটতেন কেক। রাত গড়িয়ে সকাল হলে ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাত প্রিয় লেখককে। এ ছাড়া দিনভর নানা আয়োজন তো থাকতই। বছর ঘুরে আজ এসেছে সেই শুভক্ষণ। আজ ১৩ নভেম্বর বাংলা সাহিত্যের এই জননন্দিত লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্ম নেন।
দুই শতাধিক ফিকশন, নন-ফিকশন বইয়ের লেখক হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশ তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তার একেকটি বই প্রকাশের পরপর হাজার হাজার কপি বিক্রি হতো।
সাহিত্য বিশ্লেষকদের মতে, তার নিজস্ব একটি লেখার স্টাইল ছিল, যা অসংখ্য পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। অনেক পাঠকের জন্য তিনি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে বড় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
দশ বছর পর সেই শূন্যতা কতটা পূরণ হয়েছে?
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা মিলে 'হিমু পরিবহন' নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হুমায়ুন আহমেদ যেসব স্বপ্ন দেখতেন, যা করার কথা ভাবতেন, সেগুলো করা।
এই সংগঠনের একজন সদস্য আহসান হাবীব মুরাদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই পড়ে বড় হয়েছে।
''হুমায়ূন আহমেদের জায়গায় হুমায়ুন আহমেদ। (পরবর্তীতে) হয়তো তার চেয়ে অনেক ভালো লেখক আসতে পারে। কিন্তু তার যে ধারা, যে জায়গা, সেটা থেকেই যাবে। সেটা আর পূরণ হবে না,'' বলছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার স্টাইলে অনেকে উপন্যাস বা গল্প লেখার চেষ্টা করেছে, যদিও সেসব বই খুব বেশি পাঠকপ্রিয়তা পায়নি।
হুমায়ূন আহমেদের লেখার ভক্ত আহসান হাবীব বলছেন, কারও স্টাইল অনুসরণ করে হয়তো তার পেছন পেছন কিছুদিন যেতে পারবে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। এটা নকল হয়েই থাকে, তার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব না।
''আমি একটা বই হয়তো পড়ছি, হুমায়ূন আহমেদের লেখার মতো লাগছে। কিন্তু তার বই পড়ার যে আনন্দ, সেটা পাওয়া যায় না'' তিনি বলছেন।
অন্যদের বই হুমায়ূন আহমেদের মতো বিক্রি হয় না কেন?
বাংলাদেশে এখনো প্রতিবছর কয়েক হাজার গল্প, উপন্যাসের বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রকাশকরা বলছেন, হুমায়ূন আহমেদের বই যেভাবে বিক্রি হতো, এই লেখকদের জনপ্রিয়তা থাকলেও সেভাবে বই বিক্রি হয় না।
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলছেন, ''এক কথায় যদি বলতে হয়, তাহলে বলি, তার জায়গায় এখনো কেউ আসতে পারেনি। তার লেখার যে জাদুকরী, মানুষকে আকর্ষণ করা, হুমায়ূন আহমেদ সেটা করতে পেরেছিলেন। অন্য লেখকরা হয়তো সেভাবে পারেননি। স্বাভাবিকভাবে এই কারণে ওই জায়গাটা আর কেউ পূরণ করতে পারেননি।''
তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদের একেকটা বই প্রথম প্রকাশে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কপি ছাপানো হতো। তাঁর বই কিনতে লম্বা লাইন তৈরি হতো।
কিন্তু এখন যেসব বই ছাপানো হয়, সাধারণত প্রথম প্রকাশে ৪০০ বা ৫০০ কপি ছাপানো হয়ে থাকে।
প্রকাশকরা বলছেন, প্রতিটি বই মেলায় নতুন প্রকাশিত কোন বইয়ের তুলনায় ১০ বছর পরেও হুমায়ূন আহমেদের পুরনো কোন বই এখনো তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়।