আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক। টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক তিনি। ‘টেলিফোনে শুধু কথাই নয়, মানুষ একসময় ফোনের ও প্রান্তের কথককেও দেখতে পারবে।’ এমনই দূরদর্শী মন্তব্য করেছিলেন তিনি। আজ থেকে ৯৯ বছর আগের এই দিনে তার প্রয়াণ ঘটে।
প্রথম জীবন
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৪৭ সালের তেশরা মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন।। এডিনবার্গের ১৬ চারলোটি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে একটি পাথরের খোদাই থেকে জানা যায় যে এটিই তার পরিবারের আবাসস্থল এবং তার জন্মস্থান ছিল। গ্রাহাম বেলের দুইজন ভাই ছিলেন মেলভিল জেমস বেল এবং এডওয়ার্ড চার্লস বেল।
শিশুকাল থেকেই আলেকজান্ডার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতূহলি ছিলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করতেন।
জীবনের প্রথম দিক থেকেই আলেকজান্ডার সঙ্গীত এবং কলার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন যা তার মায়ের অণুপ্রেরনায় আরোও উদ্ভাসিত হয়েছিল। কোন প্রথাগত প্রশিক্ষন ছাড়াই অনেক অল্প বয়সেই তিনি একজন পিয়ানোবাদক হয়ে ওঠেন। শৈশবে তিনি মুখাভিনয় এবং বিভিন্ন প্রকারের শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জন করতেন।
শিক্ষা
ভাইদের মত আলেকজান্ডারও ছোটবেলায় পরিবারে বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করে। যদিও খুব অল্প বয়সেই তাকে এডিনবার্গের রয়েল হাই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানে তিনি চার ক্লাস পর্যন্তই পড়াশোনা করেন এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সেই স্কুল ছেড়ে দেন। দাদা আলেকজান্ডার বেল তার নাতিকে তারই শিক্ষানবিশ শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তাকে এই বিষয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আলেকজান্ডার শিক্ষানবিশ শিক্ষক হিসেবে স্কটল্যান্ডের ওয়েস্টন হাউস একাডেমিতে যোগদান করেন। যদিও তখন তিনি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষার ছাত্র ছিলেন।
এর পরের বছর তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন যেখানে তার বড় ভাইও পড়েছিলেন। ১৮৬৮ সালে স্বপরিবারে কানাডা চলে যাওয়ার আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেছিলেন।
বৈাহিক জীবন
১৮৭৭ সালে ম্যাবেল হুবার্ড নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে জন্মগ্রহন করে। শিশু বয়সেই তার দুই ছেলে মারা যান।
টেলিফোন আবিষ্কার
তার মা ও স্ত্রী উভয়েই ছিলেন বোবা। এ কারণেই বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন।
১৮৭৫ সালের দিকে গ্রাহামবেল টেলিগ্রাফে অনেকগুরো বার্তা পাঠানো নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই কাজ করার সাথে বিদ্যুতের সাহায্যে শব্দ পাঠানো নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। হঠাৎ তারের ভেতর দিয়ে এক স্প্রিংয়ের টংকার ধ্বনি তাকে বিশেষভাবে সচকিত করে তোলে। এই বিষয়ে তিনি বিস্তর গবেষণায় মেতে উঠেন। আর এই গবেষণার ফলে গ্রাহামবেলই প্রথম টেরিফোনীয় সঠিক নীতি ধরতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,বায়ুর যেমন ঘনত্বের তারতম্য হয়, তেমনি শব্দ উৎপাদনে যদি বিদ্যুৎ প্রবাহের তারতম্য ঘটাতে পারি, তাহলে টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর বদলে শ্বধ্বনি পাঠাতে পারি। অনেক গবেষণা ও চেষ্টার ফলে তিনি এই যন্ত্র তৈরি করেডিছলেন। যা আজ টেলিফোন নামে খ্যাত।
মৃত্যু
১৯২২ সালের ২ আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে তিনি কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন।