‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতেই গ্রেপ্তার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৭:৪৩ পিএম

‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতেই গ্রেপ্তার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ

ভারতের পশ্চিমঙ্গের টেলিভিশন ও সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের যুব তৃণমূলের সভাপতি সায়নী ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দৈনিক বর্তমানসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রবিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পূর্ব থানা থেকে জানানো হয়, অভিনেত্রী সায়নীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে সকাল থেকেই তাকে থানায় বসিয়ে রেখে দীর্ঘ ১০ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, "খেলা হবে" এটি বলেই গ্রেফতার হলেন সায়নী ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩ এ, ৫০৬, ৩০৭ ও ১২০বি-তে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে।

আগরতলা পূর্ব থানা পুলিশ বলছে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সভার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জোরে গাড়ি চালিয়ে মানুষকে মারার চেষ্টা করেছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের নেত্রী সুস্মিতা দেব।

তিনি বলেন, ‘জোরে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন সায়নী, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। পুরোটাই মিথ্যা। আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে। সায়নী যতক্ষণ পুলিশের হেফাজতে থাকবে ততক্ষণ আমরা থানা ছাড়ব না। কারণ সায়নী নিরাপদ নয়।’

অভিযোগের বিষয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে নির্বাচনী প্রচার সেরে হোটেলে ফিরছিলেন সায়নী ঘোষ। গাড়িতে চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন তিনি। এ সময় যানজটে আটকে যায় তার গাড়ি। গাড়ির পেছনের আসনে বসেছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ ও সুদীপ রাহা।গাড়িটি যানজটে আটকে যাওয়ায় আশপাশের লোকেরা সায়নীকে দেখে হাত নাড়েন ও ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এই ঘটনায় পুলিশের দাবি, তখনই সায়নীর গাড়ির ধাক্কায় এক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন। সেই সুত্রে রোববার (২১ নভেম্বর) সকালে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগরতলার যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেখানে হানা দেয় পুলিশ। এরপর সায়নীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রোববার (২১ নভেম্বর) সকালে আগরতলা পূর্ব থানায় নিজেই যান সায়নী। থানায় দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তৃণমূলের যুব সভানেত্রীকে। পুরো সময় সঙ্গে ছিলেন সুস্মিতা দেবসহ প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ ও কুণাল ঘোষ। তারা থানায় থাকাকালীনই নতুন করে রাজনৈতিক অশান্তি শুরু হয় থানার বাইরে। সুস্মিতার দাবি, থানার বাইরে লাঠি হাতে, হেলমেট পরে জমায়েত করে বিজেপি।

সায়নী থানায় ঢুকতেই আক্রমণ করেন বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষে ২ তৃণমূল কর্মী আহত হন, তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর তীব্র নিন্দা করে টুইট করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এসবের পর বিকেলের দিকে আগরতলা পূর্ব থানার পুলিশ সায়নী ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে ‘হিট অ্যান্ড রান’ বা গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগে ৩০৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারিতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব।

কুণাল ঘোষ এক টুইট বার্তায় বলেন, “ প্রতিক্রিয়া, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করল সায়নী ঘোষকে। ধিক্কার ত্রিপুরা সরকার। থানায় হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হলো না। গ্রেপ্তার হল সায়নী। প্রতিক্রিয়া রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেবের।”

এদিকে, রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টির কোনও চেষ্টাই বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। ২৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আগরতলায় পুরভোট। তার ঠিক আগে রাজ্য যুব তৃণমূলের সভানেত্রীর গ্রেপ্তারি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।  

Link copied!