বাচ্চাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে বসলে পড়তে হয় বিপদে। শিশুদের দেখা অনুপযোগী এমন দৃশ্য সিনেমায় চলে এলে সৃষ্টি হয় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির। এ কারণে সপরিবারে সিনেমা দেখতে চান না অনেকে। তবে ছুটির দিনগুলোতে অবসর সময়ে সিনেমা দেখা কিন্তু বেশ জনপ্রিয় কাজ। পরিবারের ছোট থেকে বড় সবাইকে নিয়ে দেখার মতো পরিবারবান্ধব ও শিশুতোষ কিছু দারুণ সিনেমার নাম জেনে নিন আপনিও...
১.ফ্যান্টাস্টিক মি. ফক্স : প্রখ্যাত ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক রোয়াল্ড ডালের বই ফ্যান্টাস্টিক মি. ফক্স থেকে ২০০৯ সালে একই নামে সিনেমা নির্মাণ করেন জনপ্রিয় হলিউডি নির্মাতা ওয়েস অ্যান্ডারসন। ‘মি. ফক্স’ নামে এক শেয়াল যে কি পত্রিকার কলামিস্ট, তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখের জীবন থাকলেও মনের মধ্যে লালন করে চৌর্যবৃত্তির পুরোনো অভ্যাস। একদিন বন্ধুদের নিয়ে হানা দেয় পাশের খামারে। চুরি করে মুরগিসহ ক্ষেতের নানারকম শস্য। এ ঘটনার পর মি. ফক্স ও তার পরিবারকে ধরতে দুর্ধর্ষ অভিযান চালায় খামারীরা। এর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে মি. ফক্সের বন্ধু গর্তবাসী প্রাণিরা। চমৎকার এই অ্যানিমেশন সিনেমাটি হতে পারে আপনার সন্তানের প্রিয় ছবিগুলোর একটি।
২.মাই নেইবার তোতোরো : স্কুলছাত্রী সাতসুকি আর তার ছোট বোন গ্রামের বাড়িতে তোতোরো নামের এক বিশাল নাদুসনুদুস আদুরে প্রাণির দেখা পায়। তাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব নিয়েই ১৯৮৮ সালে হায়াও মিয়াজাকি নির্মাণ করেন অ্যানিমেশনধর্মী সিনেমা মাই নেইবার তোতোরো। শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা এই ছবিটি বিশ্বের সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্রের তালিকায় পেয়েছে জায়গা।
৩.পথের পাঁচালী : অপু-দুর্গা ভাই-বোনের সাথে বনেবাদারে যেন হারিয়ে যাবেন ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত পথের পাঁচালী সিনেমাটি সাথে। গ্রাম্য একটি পরিবারের নিত্য দিনকার সম্পর্কের ছোট ছোট বিষয়গুলো পরিবারের মায়ার বন্ধন শেখাবে শিশুকে।
৪.গুপি গাইন বাঘা বাইন : সত্যজিৎ রায় ১৯৬৯ সালে নির্মাণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র গুপি গাইন বাঘা বাইন। ভূতের রাজার বর পেয়ে দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়ে রোমাঞ্চকর অভিযানে। শিশুদের উপযোগী ফ্যান্টাসিধর্মী ছবিটি নির্মল বিনোদনের নিশ্চিত খোরাক হবে আপনার সন্তানের জন্যও।
৫.দীপু নাম্বার টু : বাংলাদেশি শিশুতোষ চলচ্চিত্রের তালিকায় ‘দীপু নাম্বার টু’ বেশ সুপরিচিত একটি নাম। কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই অবলম্বনে ১৯৯৬ সালে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। নতুন স্কুলে আসা কিশোর দীপু ও তার সহপাঠী তারেকের মধ্যে কীভাবে বন্ধুত্ব হয় এবং দুজন মিলে টানটান রোমাঞ্চকর অভিযান চালায় সে গল্প দেখাবে এই চলচ্চিত্রটি।
৬.ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ: নিউইয়র্কে শহরে কোনো এক ক্রিসমাসের সময়ে সবাই যখন আনন্দঘন সময় পার করছে তখন দেখা যায় ব্যবসায়ী জর্জ বেইলি আত্মহত্যার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। স্বর্গ থেকে তখন এক ফেরেশতা এসে তাকে বাধা দেয়, অতীতে নিয়ে দেখায় সে না থাকলে কারা অসুবিধায়-দুর্ঘটনায় পড়ত নানা সময়ে। ১৯৪৬ সালে নির্মিত ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই ছবিটি দেখতে বসে এক মূহূর্তও আপনার মনোযোগ হারাবে না, সময় কাটবে আনন্দে। আর শিশুরাও উপভোগ করবে, শিখবে পরিবারের বন্ধন।
৭.স্পিরিটেড অ্যাওয়ে: ২০০১ সালে হায়াও মিয়াজাকি নির্মিত জাপানি লোকসংস্কৃতি ও দর্শন দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত এ ছবিকে একুশ শতকের অন্যতম প্রধান ছবি হিসেবে ধরা হয়। দশ বছরের ছোট্ট মেয়ে চিহিরো তার বাবা মায়ের সাথে নতুন বাড়িতে যাওয়ার পথে একটি পুরোনো পার্কে থামে। পার্কে ঘুরতে গিয়ে এক পর্যায়ে সে আবিষ্কার করে এক অলৌকিক জগতে তারা আটকা পড়েছে, যেখানে বিচরণ করে অতিপ্রাকৃত আত্মারা। শুরু হয় তার ফিরে আসার সংগ্রাম।
৮.চিলড্রেন অব হেভেন : ইরানীয় চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদি নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের দারুণ চিত্রায়ণ করেছে। তেহরানের এক দরিদ্র পরিবারের ছোট্ট ছেলে আলি তার ছোট বোন জাহরার জুতা হারিয়ে ফেলে। বাড়িতে এসে বকা খাবার ভয়ে বলতেও পারে না সে কথা। আবার জুতা না পেলে বোন স্কুলে যাবে কী করে? হারানোর জুতাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইবোনের এক সুন্দর করুণ গল্প বুনে চলেন নির্মাতা। ১৯৯৭ সালে নির্মিত কালজয়ী এই ছবিটি আপনার পরিবারের ছোটবড় সকলেরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে নিশ্চিত।
৯.হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হাউজ? : প্রখ্যাত ইরানীয় চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির ১৯৯৭ সালে দুই স্কুলবন্ধুর গল্প নিয়ে তৈরি করেন দারুণ এই ছবিটি। আহমেদ স্কুল শেষে বাড়িতে ভুল করে তার বন্ধুর নোটখাতা নিয়ে চলে আসে। এদিকে সে জানে নোটখাতায় বাড়ির কাজ না করলে পরদিনই বহিষ্কার করা হবে তার বন্ধুকে। অগত্যা আহমেদ লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে বন্ধুর বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত বাসা খুঁজে পায় কিনা জানতে দেখে ফেলুন বিখ্যাত এই ছবিটি।
১০.রাতাতুয়ি (২০০৭): একটি ইঁদুর, যে কিনা প্যারিসের বিখ্যাত রেঁস্তোরার শেফ হতে চায়। কিন্তু ইঁদুরকে যেখানে খাবার নষ্ট করার জন্য দায়ী করা হয়, সেখানে ইঁদুর রান্না করলে কে খেতে চাইবে? কীভাবে ইঁদুর রেমি তার স্বপ্ন পূরণ করলো সেই ঘটনা জানতে দেখতে হবে ২০০৭ সালে নির্মিত বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার বিভাগে অস্কার জেতা রাতাতুয়ি। আর শিশুদের জন্য এই চলচ্চিত্রটি হবে দারুণ উপভোগ্য।