‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম…’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার, সুরকার আবু জাফর মারা গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৩০ মিনিটে মারা যান তিনি। মেয়ে জিয়ান ফারিয়া তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এই সুরকার। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি এক মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে গেছেন। বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন তার সাবেক স্ত্রী।
সুরকারের মরদেহ নেওয়া হচ্ছে জন্মস্থান কুষ্টিয়ায়। আজ আসরের নামাজের পর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা হবে। গুণী এ মানুষটির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সংগীতভুবন। তিনি শুধু সংগীতাঙ্গনের মানুষই ছিলেন না, ছিলেন একজন কবি ও সবার প্রিয় শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সংগীতভুবন আলোকিত করেছেন জাফর। চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তার জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর গ্রামে।
দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজশাহী-ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন আবু জাফর। তার রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানগুলো তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ আবু জাফরের সৃষ্টি। এই গান তাকে নিয়ে গিয়েছিল অনন্য উচ্চতায়। গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। পাশাপাশি ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি’, ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’—গানগুলো এখনো তার সময়ের শ্রোতাদের কাছে জড়িয়ে রেখেছে প্রেম-বিরহের নানা স্মৃতি।
নিজের রচিত সব গানের বাণীতে অসামান্য সুর সংযোজনও করেন আবু জাফর। শুধু তা–ই না, নিজের রচিত ও সুর সংযোজিত অধিকাংশ গানে কণ্ঠও দিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন সাবেক স্ত্রী ও বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনও। বিবিসির জরিপে স্থান পাওয়া ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে...’ ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে এক অদ্ভুত দ্যোতনায় আজও সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী শ্রোতাদের কানে জীবন্ত। পাশাপাশি ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’ গানটিতেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন সাবেক স্ত্রী ফরিদা পারভীন।
গানের ভুবনে থাকা মানুষটি করতেন সাহিত্যচর্চাও। লিখেছেন বেশ কিছু বইও। এর মধ্যে নতুন ‘রাত্রি পুরনো দিন’ (কাব্য), ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব’ (কাব্য), ‘বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা’ (অনুবাদ কাব্য) উল্লেখযোগ্য। অবসরটা খুব নিভৃতেই কেটেছে আবু জাফরের। আড়ালেই ছিল সুরকারের শেষ দিনগুলো। তাঁর পাশে সব সময়ের জন্য ছিলেন এক মেয়ে ও তিন ছেলে। মৃত্যুর পর ভক্তদের সামনে নতুন করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর কালজয়ী গানগুলো। এই গানের মাধ্যমেই তাকে মনে করবেন শ্রোতারা।