আগস্ট ২০, ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
২০২২ সালের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে চিত্রনায়িকা নিপুণকে জেতাতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ১৭ বার ফোন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানিয়ে গণমাধ্যমকে শিল্পী সমিতির সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমিশনার জানান, জীবনে হুমকি ছিল। যেকোনও সময় ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো শঙ্কা ছিল।
এই নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছিলেন যথাক্রমে ইলিয়াস কাঞ্চন ও জায়েদ খান। কিন্তু সেই ফল না মেনে আদালতের দ্বারস্থ হন নিপুণ। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন এই চিত্রনায়িকা।
অভিযোগ উঠেছে, চিত্রনায়িকা নিপুণের দাপটের পেছনে একজন রাজনীতিবিদের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে তাকে জেতাতে নির্বাচন কমিশনারদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এসব অভিযোগ তুলে ধরে কমিশনার বলেন, “আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয়, পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।”
বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা পিরজাদা হারুন বলেন, “২০২২ সালের নির্বাচনে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা আমাকে মানসিকভাবে এখনও আতঙ্কিত করে রেখেছে। নির্বাচনে নিপুণকে জেতাতে অনেক ওপর থেকে একজন ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন।”
এ সময় পিরজাদা হারুন অভিযোগ করেন, ওই রাজনীতিবিদ সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। কিন্তু আমি সরাসরি ‘না’ বলে দিই। পরবর্তীতে মুঠোফোনেও ভয় দেখানো হয়।
বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানোর বিষয়টি তুলে ধরে হারুন বলেন, “তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।”
সেই বছর ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে পরাজিত হন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করেন নিপুণ। কিন্তু সেখানেও একই ফলাফল পায় আপিল কমিটি। পরে ঘটনা মামলায় গড়ায়। আদালত থেকে রায় নিয়ে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন নিপুণ। পুরো সময় ধরে তিনিই দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আমূল পাল্টে যান নিপুণ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার চলাফেরা বাড়তে থাকে। সেই সময়ই পরিচয়। ২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় নিপুণের নিজস্ব পার্লার উদ্বোধন করেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সেই থেকেই আলোচনায় আসেন নিপুণ।