ঢালিউডের কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়া শোকে শোকে আচ্ছন্ন। ফারুকের মৃত্যুর খবরে ঢাকার শোবিজ পাড়ায় শোক নেমে আসে। তারকাদের অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন শোকবার্তা। সোশাল মিডিয়ার সাধারন ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে সিনেপ্রেমীরা লিখছেন শোকগাঁথা। গ্রামের সাধারণ এক তরুণ থেকে শুরু করে শহুরে, চরিত্রের নানা বৈচিত্রে প্রায় চার দশক সিনেমাপ্রেমীদের মাতিয়ে রেখেছিলেন ফারুক। আজ তিনি শারীরিকভাবে চলে গেলেন রুপালি পর্দাতো বটেই, পৃথিবীর পর্দা থেকেও। কিন্তু দর্শকদের মনের পর্দায় থেকে যাবেন চিরকালই। তার এই মৃত্যুতে শোকার্ত তাই রুপালী পর্দার জগতও।
নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন এই ন্যাচারাল অ্যাক্টর। সোমবার সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেই অবস্থায়ই মারা যান তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার শোবিজ অঙ্গনসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হয়ে ওঠে শোকবই। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, চঞ্চল চৌধুরী, বিজরী বরকতুল্লাহ, অনন্ত জলিল, চিত্রনায়িকা জাহারা মিতুসহ আরও অনেকে।
শাহনাজ খুশি তাঁর পোস্টে প্রয়াত নায়ককে নিয়ে লিখেছেন: শোক এবং শ্রদ্ধা। না ফেরার দেশে, সবার নায়ক ফারুক।
চিত্রনায়ক ওমর সানিয় লিখেছেন: আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তাঁর ওয়ালে লেখেন: বিদায় নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক।
অভিনেত্রী তারিন জাহান লিখেছেন, দীর্ঘদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ ঘণ্টা দুয়েক আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ভাই।
অভিনেতা মিশা সওদাগর চিত্রনায়ক ফারুকের সাথে নিজের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন: বিদায় মিয়াভাই। আজ সকাল ৮:৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান - বনানী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিজরী বরকতুল্লাহ লিখেছেন: কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।
সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী লিখেছেন: চিত্রনায়ক ফারুক চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেউন)। এ যেনো একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। জানিনা কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে একজন নায়কের জন্য। একেই বলে নায়ক- যার প্রস্থানে ভক্তদের চোখ ভেসে যায়।
চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু লিখেছেন, বিটিভিতে আপনার ছবি দেখে বড় হয়েছি। গ্রাম্য ছেলের ভূমিকায় কি অনবদ্য আপনি। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুক। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল লিখেছেন: প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু লিখেছেন: বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না। এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সাথে আর কোনদিন কথা বলা যাবে না, পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমেও আর জানা যাবে না, মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে।
চিত্রনায়ক জায়েদ খান ফারুকের সাথে নিজের একটি ছবি দিয়ে শোক জানিয়েছেন এভাবে: এতক্ষণ কিছু লিখিনি, কারণ মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিল না। বলেছিলেন- জায়েদ আসতেছি, আড্ডা হবে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নাই।
সাদা-কালো পর্দা থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনায় উজ্জ্বল নামটিই ছিল ‘ফারুক’। অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি সিনেমায় যার বেশিরভাগই ব্যাবসাসফল।
ফারুকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট পুরান ঢাকায়। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু, বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। পাঠান পরিবারের এই সন্তানের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকাতেই। ছাত্র বয়সেই জড়িয়ে পড়েছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধে ধরছিলেন অস্ত্রও। ফলে চিত্রনায়ক ফারুক শুধু রুপালি পর্দারই নায়ক ছিলেন না, ছিলেন মুক্তিযুদ্ধেরও বীর নায়ক।