ছবি: সংগৃহীত
হামজা চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ খেলোয়াড়। যিনি এখন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন লাল-সবুজ জার্সিতে। গত বছরের ডিসেম্বরেই বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি পান, এখন শুধু অভিষেকের অপেক্ষা।
হামজা চৌধুরীর ভক্তদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘদিনের। এখন সবার নজর ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের দিকে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই ২৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হতে পারে।
১৭ মার্চ তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। লন্ডন থেকে সরাসরি সিলেটে পৌঁছানোর পর হামজাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেড ক্লাবে খেলা এই প্রিমিয়ার লিগ তারকা সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার পারিবারিক বাড়ি হবিগঞ্জে যান।
নিজ মাতৃভূমিতে পা রেখে আত্মবিশ্বাসী হামজা জানান, বাংলাদেশ দল ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে।
তার এই প্রত্যাবর্তন লাখো বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীর আশা বাড়িয়ে দিয়েছে, যারা তাকে জাতীয় ফুটবলের জন্য নতুন আলোর দিশারি হিসেবে দেখছেন।
হামজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যেই। সেখানে ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছেন তিনি।
এমন একজন আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা ভারতীয় মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এটিকে “বাংলাদেশ ফুটবলের ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইএসপিএন ইন্ডিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি রঙিন ছবি শেয়ার করেছে, যেখানে হামজাকে উচ্ছ্বসিত ভক্ত ও সাংবাদিকদের মাঝে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা গেছে। এই ছবিটি তার আগমন ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
ভারতের স্পোর্টস সাইট রেভস্পোর্টজ হামজার আগমনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তার প্রিমিয়ার লিগ অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছে এবং এটিকে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এছাড়া ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে শঙ্কার সুর তুলে লিখেছে, “এফএ কাপজয়ী হামজার বাংলাদেশে যোগদান ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য কেন চিন্তার কারণ?” —যা ইঙ্গিত দেয় যে তার উপস্থিতি ভারতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
হামজার ফুটবলযাত্রা শুরু হয়েছিল ইউরোপে, বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে। ১৯৯৭ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরে জন্ম নেওয়া হামজা লেস্টার সিটির একাডেমির মাধ্যমে ধাপে ধাপে উন্নতি লাভ করেন। ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ দলেও খেলার সুযোগ পান তিনি।
লেস্টার একাডেমির ছাত্র হামজার পেশাদার ফুটবল যাত্রা শুরু হয় বার্টন অ্যালবিয়ন ক্লাবের মাধ্যমে। এই ক্লাবের হয়ে দুই মৌসুমে ২৮ ম্যাচ খেলে একটি অ্যাসিস্ট করেন হামজা।
২০১৭ সালে প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে অভিষেক ঘটে হামজা চৌধুরীর। লেস্টারের হয়ে তার ক্যারিয়ারে ৪টি অ্যাসিস্ট ও ২টি গোল রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে এফএ কাপ ও কারাবাও কাপে অংশ নেন এই খেলোয়াড়। তিনি কোনো ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে খেলেননি।
২০২২-২৩ মৌসুমে ওয়াটফোর্ডে ধারে খেলার পর, বর্তমানে তিনি শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলছেন। যারা বর্তমানে চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
হামজার বাংলাদেশ দলে খেলার সিদ্ধান্ত এবং তার শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল অভিজ্ঞতা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশি ভক্তদের মধ্যে প্রবল উন্মাদনা তৈরি করেছে। একইসঙ্গে ভারতীয় শিবিরে জন্ম দিয়েছে উদ্বেগের।
হামজার অভিষেক ঘিরে প্রত্যাশা এখন তুঙ্গে। অনেকেই মনে করছেন, হামজার আগমন বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য নতুন যুগের সূচনা করবে।