কে হবেন জয়ী: চিতা গতির এমবাপ্পে নাকি যাদুকর মেসি?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০৯:২২ এএম

কে হবেন জয়ী: চিতা গতির এমবাপ্পে নাকি যাদুকর মেসি?

বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল মানেই টান টান উত্তেজনা। কাতার বিশ্বকাপেও সেটি টের পাওয়া যাচ্ছে ভাল মতোই। দাপুটে সব জয় নিয়ে ফাইনাল মঞ্চে হাজির ফ্রান্স। লা ব্লুজদের প্রাণভোমরা চিতার গতির কিলিয়ান এমবাপ্পে। ওদিকে এ আসরের প্রথম ম্যাচে হোচট খাওয়া দল আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাঘের মতোই। লাতিন দেশটির প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি মুখিয়ে আছেন স্বপ্নের কাপটি উঁচিয়ে ধরতে। আরাধ্য বিশ্বকাপটি কার হতে যাচ্ছে তা নিয়েই গোটা দুনিয়া এখন ক্ষণ গুনছে। কারণ, ফায়সালা হতে যে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় বাকি!

৩৫ বছর পর আর্জেন্টিনার মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠবে, নাকি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সের কাছেই থেকে যাবে ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা? এরইমধ্যে ফাইনালের নাম হয়ে গেছে মেসি বনাম এমবাপ্পে। মেসির শ্রেষ্ঠত্বের তর্কমুক্ত পূর্ণতা মিলবে যদি আজ ট্রফি জিততে পারেন তিনি। অন্যদিকে, পেলের সাথে তুলনাটা চলে আসবে আজ এমবাপ্পের হাতে ট্রফি উঠলে। দুই তারকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যুদ্ধ তাই নতুন মাত্রা দিয়েছে ফাইনালটিকে।

আর্জেন্টাইন ফুটবলপ্রেমীরা চান মেসির বাঁ পায়ের জাদু দেখতে। তেমনি ফরাসি ফুটবলের অনুরাগীরাও চান এমবাপ্পের চিতার গতি দেখতে। আক্রমণের শৈলীতে, রক্ষণের কারুতে, মাঝমাঠের বল দখলে- দু'পাশেই এত সমান সমান ভার যে সামান্য বাতাসেই ঝুঁকে যে কোনো দিক পাল্লা। তাই সত্যিকার অর্থেই জমাট একটি ফাইনাল উপভোগ করতে যাচ্ছে সবাই।

ফাইনালের আগে মিডিয়া সেন্টারের ক্লিন্সম্যান আর আর্সেন ওয়েঙ্গার একটি অনুষ্ঠান করে এভাবেই আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স ম্যাচের স্বাদ বোঝাচ্ছিলেন। কিন্তু দু'জনেই অন্তত একটি ব্যাপারে একমত, আবেগে ফ্রান্সের চেয়ে আর্জেন্টিনা বেশি এগিয়ে। দোহায় এ মুহূর্তে প্রায় ৪০ হাজার আর্জেন্টাইন পাসপোর্টে অ্যারাইভাল সিল লাগিয়ে শহরে ঘুরছেন। তাঁদের সাথে এশিয়ান, আফ্রিকানদের অনেকে মেসির ১০ নম্বর জার্সি জড়িয়ে মেট্রোয় এমনভাবে স্প্যানিশ সুর তুলছে, তাদেরও আলাদা করা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে এডিডাস মেসির ১০ নম্বর জার্সি উৎপাদনে হিমশিম খাওয়ার খবর দিয়েছে।

দেশ-বিদেশের এত মেসিভক্তের আনাগোনা চোখ এড়ায়নি ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমেরও। 'দর্শক কিন্তু ম্যাচ জেতায় না, মাঠের ১১ জনকে ম্যাচ জেতাতে হয়। আমরা চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলব কাল।' গতকাল সাংবাদিকদের সামনে এসে এভাবেই শান্ত স্বরে হুমকিটা দিয়ে দিয়েছেন ফরাসি কোচ।

দলে ক্যামেল ফ্লু নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল সেটি কেটে গেছে। ফাইনালের আগের দিনই পুরো দল অনুশীলন করেছে। এমবাপ্পে, জিরুদ আর গ্রিজম্যানরা যে বারুদের মতো তেতে আছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর্জেন্টিনাও মেসি টনিকে দারুণভাবে প্রতিটি ম্যাচে উন্নতি করে ফাইনালে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথমে গোল খেয়ে শুরু হয় এবারের ফ্রান্সের বিশ্বকাপযাত্রা। তার পর থেকে শুধুই গোলমুখে আক্রমণ ফরাসিদের। মাঝে রিজার্ভ বেঞ্চ নিয়ে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে অবশ্য তিউনিসিয়ার কাছে হারতে হয় তাদের। তবে মরক্কোর সাথে সেমিফাইনালের ম্যাচে ফ্রান্সের ডিফেন্সের দুর্বলতা ধরা পড়েছে। গতকাল তা নিয়ে কথাও শুনতে হয় ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিসকে। ভারানে আর হার্নান্দেজকে দিয়ে দু'দিকে ঠিক সামলাতে পারেনি সেদিন ফ্রান্স। তা ছাড়া নকআউটে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সকে টাইব্রেকারের মুখোমুখি হতে হয়নি। সেদিক থেকে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষকের কিন্তু আত্মবিশ্বাস বেশি থাকবে।

দু'দলের মোট ১২ বারের দেখায় আর্জেন্টিনার জয় ৬টিতে, ফ্রান্সের ৩টিতে। তা ছাড়া সম্প্রতি উয়েফা নেশন্স লিগেও ফ্রান্স গ্রুপ পর্বে ওপরের দিকে থাকতে পারেনি। কিন্তু মঞ্চ যখন বিশ্বকাপের আর দলটি যখন ফ্রান্স, সাথে অভিজ্ঞ কোচ দেশম আর গতিদানব এমবাপ্পের জুটি— তখন 'মেসি আবেগে'র বাইরে বেরিয়ে ভাবতে হবে আর্জেন্টাইন সমর্থকদেরও। যদিও এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারার পর সত্যিকারের ধাক্কাটা খেয়েছিল আর্জেন্টিনা। তার পর মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির ৬৪ মিনিটের ওই গোলটিই আর্জেন্টিনাকে যেন পুনর্জন্ম দেয়।

এরপর একে একে মেক্সিকো, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস আর ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে এখন মেসির আর্জেন্টিনা। শেষবার ২০০২ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছিল। তার পর লাতিনের কোনো দেশ বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এবার সেই খরা ঘুচবে? নাকি কাপ থেকে যাবে ফরাসি দুর্গেই? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আর কয়েক ঘন্টা পরই।

Link copied!