চেন্নাইয়ের মাঠে ভারতীয় ওপেনার শুবমান গিল পেলেন ফিফটি। চারে নামা অধিনায়ক বিরাট কোহলি লড়লেন এক প্রান্ত আগলে। কিন্তু দুজনের কেউই পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় অবিস্মরণীয় কিছু করে দেখাতে পারলেন না। ভারতকে দুইশোর নিচে গুঁড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেন স্পিনার জ্যাক লিচ ও পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। তাদের নৈপুণ্যে বিশাল জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
মঙ্গলবার চেন্নাইতে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে ভারতকে ২২৭ রানে হারিয়েছে সফরকারীরা। ৪২০ রানের লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৯২ রানে। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে শততম টেস্টে ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট পান ম্যাচসেরার পুরস্কার।
প্রথম সেশনে ৫ উইকেট খুইয়ে ফেলা ভারত বাকি ৪ উইকেট হারায় চা বিরতির আগেই। কোহলি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন ১০৪ বল মোকাবিলা
করে। গিলের ব্যাট থেকে আসে ৮৩ বলে ৫০ রান। বিধ্বংসী এক স্পেলে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়া অ্যান্ডারসন ৩ উইকেট নেন মাত্র ১৭ রানে। ৪ উইকেট শিকার করতে লিচ খরচা ৭৬ রান।
এশিয়ার মাঠে টানা ষষ্ঠ টেস্টে জয় পেল ইংল্যান্ড। ২০১২ সালের পর ভারতের মাটিতে এটি তাদের প্রথম জয়। বিপরীতে, ২০১৭ সালের পর প্রথমবার নিজেদের মাটিতে হারল ভারত। সেবার পুনেতে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে।
আগের ১ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে মাঠে নেমেছিল ভারত। বিশ্বরেকর্ড গড়ে জিততে শেষ দিনে তাদের দরকার ছিল ৩৮১ রান। কিন্তু দিনের সপ্তম ওভারেই বিপদ ঘটে তাদের। লিচের বাউন্স আর টার্নে পরাস্ত হন চেতেশ্বর পুজারা। ১৫ রান করে বিদায় নেন তিনি। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন বেন স্টোকস।
চারে নামা কোহলিকে এরপর সঙ্গী হিসেবে পান ওপেনার গিল। তাদের জুটি জমে যাওয়ার আভাসও মিলছিল। কিন্তু অ্যান্ডারসন তা হতে দেননি। এদিন প্রথমবারের মতো তার হাতে তুলে দেওয়া হয় বল ভারতের ইনিংসের ২৭তম ওভারে। আরও একবার শুরুতে তাক লাগিয়ে দেন ৩৮ পেরোনো এই অভিজ্ঞ তারকা।
দ্বিতীয় বলেই গিলকে রিভার্স সুইংকে বোল্ড করেন অ্যান্ডারসন। দুই বল বিরতি দিয়ে আজিঙ্কা রাহানের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে ফের স্টাম্প উপড়ে নেন তিনি। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
জোড়া আঘাতে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৯২। এই ধাক্কা সামলাতে কোহলির দরকার ছিল সঙ্গ। কিন্তু হতাশ করেন প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে নজর কেড়ে নেওয়া রিশভ পান্ত ও ওয়াশিংটন সুন্দর।
১১ করা পান্ত অ্যান্ডারসনের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। শর্ট কভারে তার ক্যাচ নেন রুট। পরের ওভারে সুন্দরকে রিভিউ নিয়ে ফেরায় ইংলিশরা। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরার আগে ডম বেসের বলে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক জস বাটলারের হাতে।
১১৭ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারতের ইনিংসে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আর কোনো ধাক্কা দেয়নি ইংল্যান্ড। তবে হাতে ৪ উইকেট নিয়ে দুই সেশন কাটিয়ে অন্তত ড্র পেতে হলেও কোহলিদের উপহার দিতে হতো অসাধারণ পারফরম্যান্স। সেই কঠিন কাজটা সম্ভব হয়নি।
সপ্তম উইকেটে অবশ্য কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়ার পথে ভারতীয় দলনেতা তুলে নেন ফিফটি। কিন্তু দুজনের বন্ধন ছিন্ন হওয়ার পর ২১ রানের মধ্যে বাকি সব উইকেট হারায় ভারত।
৪৬ বল খেলে ৯ রান করা অশ্বিনকে বিদায় দেন বাঁহাতি লিচ। তার ঘূর্ণি জালে আটকা পড়ে শাহবাজ নাদিমও স্বাদ নেন ডাকের। মাঝে দিনের সবচেয়ে বড় শিকার ধরেন স্টোকস। তার নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন কোহলি। লড়াই থামাতে বাধ্য হওয়ার আগে ৯ বাউন্ডারি মারেন তিনি। ভারতের শেষ উইকেটটি পান জোফরা আর্চার। জাসপ্রিত বুমরাহ হন বাটলারের গ্লাভসবন্দি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৫৭৮
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৩৭
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭৮
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪২০) ৫৮.১ ওভারে (গিল ৫০, পুজারা ১৫, কোহলি ৭২, রাহানে ০, পান্ত ১১, সুন্দর ০, অশ্বিন ৯, নাদিম ০, ইশান্ত ৫*, বুমরাহ ৪; আর্চার ১/২৩, লিচ ৪/৭৬, অ্যান্ডারসন ৩/১৭, বেস ১/৫০, স্টোকস ১/১৩)
ফল: ইংল্যান্ড ২২৭ রানে জয়ী।