চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ-১ থেকে সেমিফাইনালে উঠলো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। সুপার টুয়েলভ থেকে বিদায় নিলো সেমির দৌঁড়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পেসার কাগিসো রাবাদার হ্যাট্টিকে ইংল্যান্ডকে ১০ রানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ম্যাচ জিতলেও রান রেটের মারপ্যাচে সেমিতে খেলার আশা ভঙ্গ হয় চোকার খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার।
গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ, অর্থাৎ ৫ খেলায় ৪ জয়ে ৮ করে সমান পয়েন্ট ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষ দুই দল হয়ে সেমির টিকিট পায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের রান রেট +২.৪৬৪। আর অসিদের +১.২১৬। দক্ষিণ আফ্রিকার রান রেট +০.৭৩৯। অন্য গ্রুপ-২এর সব খেলা শেষে সেমির লাইন-আপ চূড়ান্ত হবে।
শারজাহতে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে ভালো শুরু হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৫ রানে ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে হারায় তারা। ২ রান করে ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলির বলে বোল্ড হন হেনড্রিক্স।
এরপর আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কককে নিয়ে ৫২ বলে ৭১ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়েন তিন নম্বরে নামা রাসি ভান ডার ডুসেন। ২৭ বলে ৪টি চারে ৩৪ রান করে স্পিনার আদিল রশিদের শিকার হন ডি কক।
১২তম ওভারে দলীয় ৮৬ রানে থামেন ডি কক। এতে ক্রিজে ডুসেনের সঙ্গী হন আইডেন মার্করাম। উইকেটে দ্রুত সেট হয়ে ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর মারমুখী হয়ে উঠেন ডুসেন ও মার্করাম। তৃতীয় উইকেটে ৫২ বলে অবিচ্ছিন্ন ১০৩ রান যোগ করেন তারা। জুটিতে ডুসেন ২৭ বলে ৪৯ রান ও মার্করাম ২৫ বলে ৫২ রান করেন। ২০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১৮৯ রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
৩৭ বলে ডুসেন এবং ২৪ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি করেন ডুসেন ও মার্করাম। তবে ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস হয় ডুসেনের। ৬০ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় অপরাজিত ৯৪ রান করেন তিনি। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৫ বলে অপরাজিত ৫২ রান তুলেন মার্করাম। ইংল্যান্ডের মঈন-রশিদ ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে ১৯০ রানের টার্গেট দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেমিফাইনালে যাবার জন্য সমীকরনও পায় এই গ্রুপ থেকে সেমির দৌঁড়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
টার্গেট নিয়ে ব্যাট করা ইংল্যান্ডকে ১৩১ বা তার নীচে অলআউট করে দিলে সেমিতে ইংল্যান্ডে সাথে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাদ পড়বে অস্ট্রেলিয়া। আর যদি ১৩২ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড, তবে ইংলিশদের সাথে সেমিতে খেলবে অস্ট্রেলিয়া। আর গ্রুপের শীর্ষে থাকার জন্য ১০৬ রান করতে হবে ইংল্যান্ডকে। তবে ৮৭ রান করলেও, গ্রুপে দ্বিতীয়স্থানে থাকবে ইংলিশরা।
এমন সমীকরন নিয়ে জবাব দিতে নেমে দলীয় ৩৮ রানে আহত অবসর নেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। ১৫ বলে ২০ রান করেন তিনি। এরপর দলীয় ৫৮ রানে জশ বাটলার ও ৫৯ রানে আউট হন জনি বেয়ারস্টো। বাটলার ১৫ বলে ২৬ ও বেয়ারস্টো ১ রানে ফিরেন।
৫৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মঈন ও ডেভিড মালান। ৩৬ বলে ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরান তারা। দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২৭ বলে ৩৭ রানে মঈন এবং ২৬ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন মালান। ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইংল্যান্ড ১৩২ রান তুললে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়। সুপার টুয়েলভ থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নিশ্চিত হয়।
মালান যখন ফিরেন তখন জিততে ২২ বলে ৪৫ রান দরকার ছিলো ইংল্যান্ডের। পরের ১১ বলে ২০ রান তুলেন লিয়াম লিভিংস্টোন ও অধিনায়ক ইয়োইন মরগান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে আউট হন লিভিংস্টোন। ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৭ বলে ২৮ রান করেন তিনি। তখন ১১ বলে ২৫ রানের প্রয়োজন ছিলো ইংল্যান্ডের।
লিভিংস্টোনকে হারানোর পরও ক্রিস ওকসের ছক্কায় ঐ ওভার থেকে ১১ রান পায় ইংল্যান্ড। তাই শেষ ওভারে ১৪ রানের সমীকরন পায় তারা।
শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে জ্বলে উঠেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদা। প্রথম তিন বলে ওকস-মরগান ও ক্রিস জর্ডানকে তুলে নিয়ে হ্যাটিক পূর্ণ করেন রাবাদা। এবারের আসরের তৃতীয় এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৬তম হ্যাট্টিক এটি।
হ্যাট্টিকের পর পরের তিন বলে মাত্র ৩ রান দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সান্তনার জয় এনে দেন রাবাদা। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭৯ রান তুলে ইংলিশরা। মরগান ১৭ ও ওকস ৭ রান করেন। ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে হ্যাট্টিকসহ ৩ উইকেট নেন প্রোটিয়ার পেসার রাবাদা। ম্যাচ সেরা হন ডুসেন।