শেষ পর্যন্ত কোনো মুসলিম দেশে আয়োজন হল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’খ্যাত ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। এর আগে রেকর্ড পাঁচবার এই আয়োজনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল মরক্কো। কিন্তু কাতার আর ব্যর্থ হল না। মরক্কো ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১০ ও ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ নিজেদের দেশে করতে চেয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকান দেশ মরক্কো। যদি তাঁরা ২০১০ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ পেতো তাহলে তাঁরাই হতো প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে এই বিশাল আয়োজনের আয়োজক। তবে কখনো এশিয়ান দেশগুলোর অসহযোগিতা কখনোবা পশ্চিমা দেশগুলোর নানা ’চক্রান্ত’ মরক্কোকে দেয়নি সেই গৌরব অর্জণের সুযোগ। এরপরও মরক্কো ফের ২০৩০ সালের বিশ্বকাপের জন্য বিড করছে।
মরক্কো ব্যর্থ হলেও কাতার পেরেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে আয়োজন করল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়ার আসরের। ৩২ দেশের প্রতিনিধিত্বে এই আসর আজ মাঠে গড়াচ্ছে স্বাগতিক কাতার ও ল্যাতিন দেশ ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায় ষাট হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার আল বাইয়েত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি দিয়ে পর্দা উঠবে বিশ্বকাপের।
২০২২ সালের এই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাঁদের টপকে কাতারের দখলে হোস্টের মর্যাদা। আর এতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট পশ্চিমারা। তাঁদের মিডিয়াও নিরপেক্ষতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমালোচনা করেই যাচ্ছে অনবরত। তারপরও সব বাধা পেরিয়ে আজ শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী এই আনন্দযজ্ঞ। এর আগে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত ছিল এ নিয়ে তীর্যক সব প্রশ্ন। ফিফা সভাপতি জিওভান্নি ইনফান্তিনোর সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটাই ছিল কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে সমালোচনামূলক নানা প্রশ্ন। ফিফা সভাপতিও পাল্টা জবাব দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছেন এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পশ্চিমাঘেঁষা মিডিয়াকর্মীদের।
২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর ছিল কাতারের জন্য ঐতিহাসিক দিন। ওই দিন সাবেক ফিফা সভাপতি সেফ ব্লাটার ২০২২-এর বিশ্বকাপের হোস্ট হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণা করেন। এরপরই শুরু হয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশের বিশ্বকাপের ব্যাপক প্রস্তুতি। সেই সূত্র ধরেই পাল্টে যাওয়া রাজধানী দোহাসহ পুরো কাতার। বিলিয়ন বিলয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত স্টেডিয়াম, হোটেল, মেট্রোসহ অত্যাধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা সবই হয়েছে। সেই সুবিধাই নিতে শুরু করেছেন এখন কাতারে অবস্থানরত সমালোচকরাও। কাতার বিশ্বকাপই শেষ আসর যেখানে ৩২ দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। ২০২৬-এর বিশ্বকাপের তিন যৌথ আয়োজক। মেক্সিকো, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র্রের সেই আসরে ৪৮ দল লড়বে ট্রফি জয়ের জন্য।
দোহা এবং এর আশপাশের শহরে আট স্টেডিয়ামে হবে এবারের বিশ্বকাপ। এই স্টেডিয়ামগুলো হলো লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম, আল বাইয়েত স্টেডিয়াম, খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল থুমামা স্টেডিয়াম, এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম ৯৭৪, আল জানুব স্টেডিয়াম ও আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম। ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে এই বিশাল আয়োজনের।
৩২ দেশের অংশগ্রহণ থাকলেও কাতারের মাঠে ফেবারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। এর বাইরে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার মতো যেকোনো দেশও দেখাতে পারে চমক।
কাতার এখন সারা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশের মানুষের উপস্থিতিতে সরগরম। হোটেলে জায়গা নেই। দোহার দুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মহা ব্যস্ততা। বিভিন্ন দেশের ফুটবল টিম আর সমর্থকদের নিয়ে নামছে বিমান। নানা দেশ থেকে আসা ফুটবলপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মুখরিত দোহা। যাদের পক্ষে আটটি স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা হবে না তাঁদের জন্য ফ্যান ফ্যাস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোট দেশ। আবাসিক ব্যবস্থা অপ্রতুল। তাই জাহাজে রাখার ব্যবস্থা ফুটবল ভক্তদের। আবার কনটেইনার আকৃতির ফ্যান ভিলেজও করা হয়েছে। অবশ্য সবই ব্যয়বহুল। এই বিশ্বকাপ একটি দেশকেই চ্যাম্পিয়ন করাবে। বাকি ৩১ দেশ অংশ গ্রহণের আনন্দ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যাবে। এর মধ্যে কারো কারো একটি জয় বা পরের রাউন্ডে যাওয়াটা হবে বড় প্রাপ্তি।
কাতার বিশ্বকাপ কিছু নতুন ফুটবল প্রতিভার জন্ম দেবে। সে সাথে এটাই শেষ বিশ্বকাপ লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোসহ আরো অনেক তারকার। যদিও বেশির ভাগের প্রত্যাশা মেসির দেশ আর্জেন্টিনা বা নেইমারের ব্রাজিল জিতুক এই শিরোপা। কার হাতে উঠবে সেই স্বপ্ন শিরোপা তা দেখতেই মুখিয়ে এখন গোটা বিশ্ব।