নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৭:০২ এএম
সত্যিকারের কোনো নাম্বার নাইনকে ছাড়াও যে গোলবন্যার উৎসব করা যায়, সেটিই দেখিয়ে দিল লুইস এনরিকের দল। কোস্টারিকাকে উড়িয়ে দাপটের সাথেই স্পেন শুরু করল তাঁদের বিশ্বকাপ অভিযান। দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বুধবার ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ৭-০ গোলে জিতেছে স্পেন। বিশ্বকাপে এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ১৯৯৮ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ৬-১ ব্যবধানে জিতেছিল স্পেন। সেই রেকর্ড ভেঙে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ৭ গোল দিল তাঁরা। এদিনই স্পেনের শততম গোল হয়ে গেল বিশ্বমঞ্চে। শুধু এই রেকর্ডই নয়, বিশ্বকাপ ইতিহাসে লা রোজাদের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোলের কীর্তি গড়লেন ১৮ বর্ষী গ্যাভি। তিনি এখন বসলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের পরের আসনেই। ১৭ বছরের পেলে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি গড়েছেন।
খেলায় জোড়া গোল করেছেন ফেররান তরেস। একটি করে গোল করেছেন দানি ওলমো, মার্কো আসেনসিও, গ্যাভি, কার্লোস সলের ও মোরাতা।
সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসেছিল এনরিকের স্পেন। কীভাবে জায়গা বের করে নেওয়া যায়, তারই যেন উদাহরণ ছিল পেদ্রি, গাভি, ওলমোদের একেকটি মুভ। তাদের আক্রমণের ঝাপটা সামলে গোলের জন্য একটি শটও নিতে পারেনি কোস্টারিকা!
বাঁশি বাজতে যা দেরি, আক্রমণের নয়! আক্ষরিক অর্থে প্রথম মিনিট থেকে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল স্পেন। পঞ্চম মিনিটে পেয়ে গেল প্রথম ভালো সুযোগ। পেদ্রির কাছ থেকে বল পেয়ে দূরের পোস্টে একটুর জন্য শট লক্ষ্যে রাখতে পারলেন না অরক্ষিত ওলমো।
নবম মিনিটে সুযোগ তৈরি করলেন পেদ্রি। কিন্তু কাজে লাগাতে পারলেন না আসেনসিও। রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের শট বেরিয়ে গেল বার ঘেঁষে।
এর দুই মিনিট পর ফুরাল গোলের জন্য স্পেনের অপেক্ষা। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে চমৎকার চিপে গ্যাভি খুঁজে নিলেন ওলমোকে। প্রথম স্পর্শে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, এগিয়ে আসা গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে এড়িয়ে জাল খুঁজে নিলেন তিনি। এই গোলেই বিশ্ব মঞ্চে স্পেনের গোল স্পর্শ করলো তিন অঙ্ক।
শততম গোলের পর আরেকটির জন্যও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। ২১তম মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলল স্পেন।
মাঝমাঠ থেকে বাঁদিকে বল পেলেন অরক্ষিত জর্দি আলবা। কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও গেলেন না। বার্সেলোনা ডিফেন্ডার পেলেন অনেক সময়। দেখেশুনে ডি-বক্সে খুঁজে নিলেন আসেনসিওকে। তার শটে হাত ছোঁয়ালেও জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি কোস্টারিকা গোলরক্ষক।
৩১তম মিনিটে সফল স্পট কিকে দলের তৃতীয় গোলটি করেন তরেস। নাভাসকে অন্য দিকে পাঠিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জাল খুঁজে নেন বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড। আলবাকে ফাউল করায় পেনাল্টি পেয়েছিল স্পেন।
৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান আরও বাড়ান তরেস। এতে অবশ্য ভাগ্যেরও বেশ ছোঁয়া আছে। সতীর্থের কাছ থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন তরুণ ফরোয়ার্ড। কিন্তু কোস্টারিকার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল যায় তাঁর কাছেই। এবার ঠিকই জাল খুঁজে নেন তিনি।
হ্যাটট্রিকের চেষ্টার সুযোগ পাননি তরেস। এই গোলের একটু পরেই তাঁকে ও পেদ্রিকে তুলে নিয়ে মোরাতা ও কার্লোস সলেরকে নামান এনরিকে।
এরপর কোচ আরও তিনটি পরিবর্তন করেন, তবে স্পেনের খেলায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। একই রকম আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে যায় তাঁরা। ফলও মিলতে থাকে। ৭৪ তম মিনিটে মোরাতার বুদ্ধিদীপ্ত ক্রসে সাইড ফুটের চমৎকার ভলিতে স্কোরলাইন ৫-০ করেন গ্যাভি।
পোস্টে লেগে বল জড়ায় জালে। স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের কীর্তি গড়েন বার্সেলোনার এই মিডফিল্ডার।
৯০তম মিনিটে দলের ষষ্ঠ গোলটি করেন সলের। নিকো উইলিয়ামসের ক্রস ঝাঁপিয়েও ঠিক মতো ফেরাতে পারেননি নাভাস। বল যায় সরাসরি সলেরের কাছে। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকা মিডফিফল্ডার বাকিটা সারেন অনায়াসে। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে স্পেনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান মোরাতা। ৫৭তম মিনিটে মাঠে আসার পর থেকেই গোলের জন্য মরিয়া ছিলেন এই স্ট্রাইকার। তাঁর পা থেকেই আসে শেষ গোল। ওলমোর সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে জাল খুঁজে নেন তিনি।
২০১০ আসরে বিশ্বকাপ জয়ের পথে মোটে আট গোল করেছিল স্পেন। এবার তাঁরা আসরই শুরু করল সাত গোল দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভাসিয়ে। এই জয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেছে স্পেন। দিনের আন্য ম্যাচে জার্মানিকে ২-১ গোলে হারানো জাপান আছে এখন দুই নম্বরে।