হতদরিদ্রদের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৬ষ্ঠ। তবে হতদরিদ্রদের ধর্ম ও জাতিসত্তার ভিত্তিতে সমীক্ষায় দেখা যায় যে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে হতদরিদ্রর সংখ্যা বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে করানোর সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে আসে।
১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। এবারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সকলকে সম্মান জানিয়ে একসাথে দারিদ্র্য বিমোচন’।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে হতদরিদ্র বেশি
বর্তমানে দেশের ২ কোটি ২৯ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছেন। যা মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ। আর এই হতদরিদ্রদের মধ্যে আয়ের দিক থেকে ধর্ম ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে হতদরিদ্রের হার ১১ শতাংশ। এ হার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া খ্রিষ্টধর্মের ২১ শতাংশ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ২২ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা খাদের কিনারে
দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে হতদরিদ্রর পরিমান অবাক করার মতো। কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে প্রায় শতভাগ হবার পথে রয়েছে হতদরিদ্রতার সংখ্যা।
জাতিগত ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে চাকমাদের ৭১ শতাংশ, সাঁওতালদের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ, মারমাদের ৬৫ শতাংশ, ত্রিপুরাদের ৭৭ শতাংশ, গারোদের ৪৭ শতাংশ, ম্রোদের ৯৮ শতাংশ, খাসিয়াদের ১৭ শতাংশ। তবে সার্বিক পরিস্থতে ভাল রয়েছে মণিপুরিরা। মণিপুরিদের ৮ শতাংশ হতদরিদ্র।
ধর্ম ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক আলাদা সমীক্ষা করার কারণ সম্পর্কে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলফিকার আলী বলেন, ধর্মভিত্তিক এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে দরিদ্রের হার কত, তা আমরা দেখতে চেয়েছি। এ সমীক্ষার ফলে সরকারের যেকোনো নীতিকৌশল প্রণয়ন সহজ হবে। সবার দিকেই সরকারের সমান নজর যাবে।
শিক্ষায় পিছিয়েও আয়ে শীর্ষে নারায়নগঞ্জ
সমীক্ষায় জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হতদরিদ্রের সংখ্যা সবচেয়ে কম নারায়ণগঞ্জে, যা শতকরা হিসাবে মাত্র ১ শতাংশের নিচে। অথচ এই জেলাতেই কিনা ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪২ শতাংশই স্কুলে যাচ্ছে না। আয়ের দিক থেকে প্রথম স্থানে থাকা নারায়ণগঞ্জের পেছনেই রয়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা মাদারীপুর। নারায়ণগঞ্জ আয়ে সবার শীর্ষে, অথচ শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে। মূলত শিল্পকারখানা ভিত্তিক জেলা হওয়ায় আয়ের উৎস বেশি। কাজের প্রচুর সুযোগ থাকায় অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের কাজে নামিয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব শিক্ষায় পড়েছে।
বহুমাত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, জাতিসংঘ–ঘোষিত ১৫ বছরমেয়াদি (২০১৫-৩০) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী সব দেশ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইনডেক্স) ব্যবহার করে দারিদ্র্যের হার বের করতে সম্মত হয়েছে।
ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে আয়ের ভিত্তিতে দারিদ্র্য পরিমাপ বাদ দিয়ে বহুমাত্রিক পদ্ধতিতে দারিদ্র্যের হার বের করছে। বাংলাদেশ আগামীতে তা শুরু করবে।
উল্লেখ্য দুইভাবে দারিদ্র্য নির্ণয় করা হয়। প্রথমত, আয় দিয়ে। দ্বিতীয়ত, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যসূচক দিয়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিদ্যুৎসহ মোট ১০টি সূচক দিয়ে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক ব্যবহার করা হয়।