গারোদের সর্ববৃহৎ ও সর্বশেষ উৎসব ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব। ওয়ানগালা মানে হলো সৃষ্টিকর্তার নামে জুম থেকে উৎপাদিত প্রথম ফসল উৎসর্গ করা। এই ওয়ানগালা উৎসবের মাধ্যমে মুলত গারোরা তাদের প্রধান দেবতা তাতারা- রাবুগা-নস্তু-নপান্তু-মিমি-সালজং এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। প্রকৃতি পুজারি গারোরা বিশ্বাস করে তিনিই সময়মতো রোদ বৃষ্টি, ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ রাখেন। এই উৎসব তাই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার উৎসব হিসেবেও পরিচিত। এই ওয়ানগালা উৎসবেই গারোরা সর্বাধিক বিভিন্ন ধরনের নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই বর্ণিল নৃত্য ছন্দে ওয়ানগালা উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
সেই ওয়ানগালাতেই আজ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মেতেছিলেন গারো সম্প্রদায়ের লোকজন।
‘এসো সবাই, নারী পুরুষ নির্বিশেষে যত ভেদাভেদ আর গ্লানি ভুলে আমরা এক হই’ গানে মুগ্ধ আগত অতিথিরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রসারের লক্ষ্যে এ ধরনের নানা অনুষ্ঠান ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে পৃষ্টপোষকতা করে আসছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সে লক্ষ্যে দেশে সংস্কৃতি চর্চার একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে প্রশিক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় গারোদের “ওয়ানগালা নৃত্য” কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বৃহস্পতিবার। এদিন চার দিন ব্যাপী এ কর্মশালার সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে।
শুরুতেই গারো সম্প্রদায়ের চারুশিল্পীদের ৫০টি চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শিত হয় একটি ভিডিও ডকুমেন্টেশন। পরে গারো সম্প্রদায়ের দেশাত্ববোধক গান "এসো সবাই, নারী পুরুষ নির্বিশেষে যত ভেদাভেদ আর গ্লানি ভুলে আমরা এক হই" পরিবেশন করা হয়। মান্দি ভাষার গানের সাথে পরিবেশিত হয় মোহময় নৃত্য। প্রখ্যাত গারো নৃত্যগুরু মালা মার্থা আরেং, নৃত্য প্রশিক্ষক, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, বিরিশিরি এবং সহযোগী প্রশিক্ষক প্রভাতী রাংসা, নৃত্যশিল্পী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, বিরিশিরি এই নৃত্য পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানের বড় আকর্ষণ ছিল বাহারি নৃত্য। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
পরে কর্মশালা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত গারো নৃত্যগুরু মালা মার্থা আরেং, নৃত্য প্রশিক্ষক, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, বিরিশিরি, একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) খন্দকার রেজাউল হাশেম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পরে অংশগ্রহনকারী নৃত্য শিল্পী ও প্রশিক্ষকদের উপহার ও সনদ পত্র তুলে দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
সঙ্গীত ও নৃত্যশিল্পীদের সাথে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারী ২ শিক্ষার্থী তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে অনুভুতি ব্যক্ত করেন। পরে কর্মশালার বিষয়বস্তু ও শিক্ষণীয় বিষয়ের উপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ৫০জন শিক্ষার্থীর পরিবেশনায় উপস্থাপন করা হয় ১৬ মিনিট ব্যাপ্তির বর্ণিল সজ্জার মনোজ্ঞ জুম ওয়ানগালা নৃত্য।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ ওয়ানগালা নৃত্য কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়েছিল গত ১৯ শে মার্চ।