স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১, ২০২৩, ১২:৩৩ এএম

স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?

ফাগুনের আগুন-রাঙা মার্চ। বাংলার এবং বাঙালির স্বাধীকারের মাস। এই মাসেই স্বাধীনতাকামী জাতির চূড়ান্ত লড়াইয়ের সূচনা ঘটে ১৯৭১ সালে। মার্চের সেই উতপ্ত দিনগুলো জাতিকে আজও পথ দেখায় সংগ্রামের। আবারও মার্চ এসেছে জাতির দুয়ারে এসেছে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সাহসী স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে।

সত্তুরের নির্বাচনী যুদ্ধে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকচক্র বিজয়ী বাঙালির হাতে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। নানা টালবাহানায় কালক্ষেপণ করতে থাকে পাকিস্তানিরা। বাঙালিকে ন্যায্য ক্ষমতা না দিয়ে হানাদার ও তাদের দোসররা গণহত্যার নীলনকশা করতে থাকে।

মুক্তিকামী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন এবং সর্বাত্মক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। 

কিন্তু হানাদার পাকিস্তানিরা জনতার গণদাবিকে উপেক্ষা করে বেছে নেয় অস্ত্রের ভাষা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুক্তিকামী নিরীহ জনগণের উপর সশস্ত্র  হামলা চালিয়ে শুরু করে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা।

কুখ্যাত 'অপারেশন সার্চলাইট' নামের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নির্মূল করার জঘণ্য চেষ্টা হয়। ওই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এবং  ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত 'অপারেশন ব্লিটজ'-এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। গণহত্যার এই অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সব বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া এবং বাঙালি জাতি ও তাদের স্বাধীনতার স্পৃহাকে চিরতরে মুছে দেওয়া।

হানাদার পাকিস্তানিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। বাংলাদেশ পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে।

পাকিস্তানি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে অকুতোভয় বাঙালি জাতি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠে। সাহসে ও শপথে ঐক্যবদ্ধ হয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য। শুরু হয় বাঙালির মহত্তম মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের সশস্ত্র যুদ্ধ। গর্জে উঠে বীর বাঙালি। তাদের মনে জ্বলে উঠে মুক্তির আগুন, স্বাধীনতা লাভের বাসনা।

কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় যেমন বলেছেন:

স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,

কে বাঁচিতে চায়?

দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,

কে পরিবে পায়।

পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকের শৃঙ্খল খান খান করে ১৯৭১ সালের মার্চে সূচিত মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে অভ্যুদয় ঘটায় স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, লক্ষ শহিদের জীবনদানের বিনিময়ে, হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, দুর্বার মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়হীন সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছে বাংলার, বাঙালির সর্বাত্মক বিজয়।

বিশ্বের বুকে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতির রথে বাংলাদেশ স্পর্শ করে চলেছে নানা মাইলফলক। বাংলার, বাঙালির স্বাধীনতার মাস মার্চের সূচনালগ্নে আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে।

আমরা স্মরণ করছি স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় জাতীয় নেতাদের। জাতির স্বাধীনতার বেদিমূলে জীবন উৎসর্গকারী মহান শহিদদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা আর স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নিবেদন করছি সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

Link copied!