এলসি খুলতে লাগাম : কমছে শিল্প বিনিয়োগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১২, ২০২২, ১১:১৫ পিএম

এলসি খুলতে লাগাম : কমছে শিল্প বিনিয়োগ

বর্তমানে ২ লাখ ডলারের এলসি খুলতেও নেয়া লাগছে বিশেষ অনুমতি। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকগুলো এখন এলসি স্বল্প পরিমানে খুলছে। কিন্তু এর ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পকাঁচামাল আমদানি তলানিতে নেমেছে। তাই ডলার সংকট মোকাবেলায় যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় সেদিকে নজরদারি করতে হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৫ শতাংশ

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য মাত্র ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন বাংলাদেশের শিল্পদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৫ দশমিক ৩৪  শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ১১৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের এলসি খুলেছিলেন শিল্পদ্যোক্তারা।

এর অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা কলকারখানা স্থাপনে আগের চেয়ে যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে নতুন বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী বলেও ধারণা করছে অর্থনীতিবিদরা।

সেন্টার ফল পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডলার সংকট মোকাবেলায় এলসি খোলায় লাগাম টানলেও সংকট কিন্তু কাটেনি। কিন্তু এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে নজর রাখা উচিৎ ছিল। নতুন বিনিয়োগ না হলে রপ্তানির বাজারও ধসে পড়বে। যার ফলে একটি দুষ্টু চক্রের মধ্যে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি।

পাচারকৃত অর্থ ফেরতে দিকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, রেমিট্যান্সের টাকা মূল চ্যানেলে না আসলেও তা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে। কিন্তু টাকা পাচার রোধ না করা গেলে এই সংকট কাটবে না। পাশাপাশি অর্থ ফেরত আনার বিষয়ও জোর দিতে হবে।

ডলারের সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ

ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান। ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে প্রায় ২২ শতাংশ।

গত বছরের ৪ অক্টোবর আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ ওই সময় ১ ডলার কিনতে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা লাগত। বর্তমানে ডলারের মূল্য ১০৪ টাকা ১০ পয়সা।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমান সংকটে নতুন বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কেননা, ১১০ টাকা দিয়ে ডলার কিনে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করে শিল্প স্থাপন করলে, সেই কারখানা যখন উৎপাদনে যাবে-তা থেকে মুনাফা আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সে কারণেই উদ্যোক্তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।

আর এলসি না খোলার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা ও ব্যাংকের নিয়ম অনুসারেই হচ্ছে বলে জানায় ব্যাংকাররা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশই রেমিট্যান্স থেকে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছে। এ কারণে আমদানির এলসি খুলতে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। এলসির আকার ২ লাখ ডলারের বেশি হলে ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

Link copied!