রাসেলস ভাইপার সাপের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২২, ২০২৪, ০৩:১১ পিএম

রাসেলস ভাইপার সাপের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

ছবি: ঢাকা পোস্ট থেকে সংগৃহীত

একসময় দেশের উত্তরাঞ্চলের সরীসৃপ হিসেবে পরিচিত পেলেও এখন গণ্ডি ছাড়িয়ে নিজেদের বিচরণ ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে রাসেলস ভাইপার। ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। মানুষ দেখলেই হামলে পড়ছে। গত কয়েকদিন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিষদাঁতযুক্ত এই সাপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাসেলস ভাইপার সাপের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে মানুষের সঙ্গে এই সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচুভূমির ঘাসবন, ঝোঁপঝাড়, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে ও মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বিবৃতিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: মানুষ দেখলেই তেড়ে আসে রাসেলস ভাইপার

সাপের কামড় এড়াতে করণীয়-
১. যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
২. লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না।
৩. সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন।
৪. রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন।
৫. বাড়ির চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
৬. পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৭. সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
৮. প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন অথবা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।

সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়:
১. দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশন করলে বসে পড়তে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনের ক্ষেত্রে হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিরা নাড়াচাড়ায় মাংসপেশির সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
২. আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে ফেলতে হবে।
৩.শরীরে ঘড়ি, অলঙ্কার, তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।
৪. দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সুই ফোটাবেন না কিংবা কোন রকম প্রলেপ বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
৫. সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
৬. যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।
৭. আতঙ্কিত হবেন না, রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়
বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টেক পাখি ও কিছু প্রজাতির সাপও রাসেল ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণী মানুষ নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেল ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, রাসেল ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। এই সাপ ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Link copied!