জুন ১৮, ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম
‘মৃত প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাকের পর ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রোগীকে অচেতন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে অ্যাম্বুলেন্সে ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হয়। প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণে আঁখির মৃত্যু হয়েছে। এ রকমটা স্বাভাবিকভাবেই হতে পারে।’
রবিবার (১৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাবএইড হাসপাতালের পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা এসব তথ্য জানান।
আঁখির চিকিৎসায় ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হলেও মৃত্যুপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোনো চিকিৎসক আসেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মেহের-এ-খোদা জানান, গত ১০ জুন বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে অচেতন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে অ্যাম্বুল্যান্সে আনা হয়েছিল। তার প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।
তিনি বলেন, “ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছিল। রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ছয় সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান অব্যাহত ছিল।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “রোগীর ইউরিন আউটপুট বন্ধ থাকায় ডায়ালিসিস প্রদান করা হচ্ছিল। সকল প্রকার প্রচেষ্টার পরও রোগীর কোনো প্রকার উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি।আজ (রবিবার) দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।”
প্রসঙ্গত, প্রসব ব্যথা উঠলে স্ত্রী মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বামী ইয়াকুব আলী। ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হলেও সেই সময়ে ওই চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। সেই চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়া এবং রোগীর কোনোরকম চেকআপ না করেই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন কয়েকজন ডাক্তার ও সহকর্মীরা। পরে আঁখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থার মধ্যে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতক।
এ বিষয়ে শুরু থেকেই আঁখির স্বামী ইয়াকুবের সঙ্গে লুকোচুরি করছিলেন চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে ইয়াকুবকে জানানো হয়, সেন্ট্রাল হাসপাতালে তার স্ত্রীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে গত ১০ জুন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে আঁখিকে ভর্তি করান ইয়াকুব। এরপর সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে জানতে পারেন তার নবজাতক হাসপাতালের এনআইসিইউতে মারা গেছে।
পরবর্তীতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে আঁখিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। তবে তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ছিল না।
পরবর্তীতে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়। মামলা হওয়ার পরে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ।
শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় তদন্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. আবু হোসেন মঈনুল আহসানের নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি। পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটি লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অভিযুক্ত চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদফতরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না। এছাড়া আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান ভালো না হওয়ায় অপারেশন কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।