এপ্রিল ৯, ২০২৩, ০২:১০ এএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক মানের থেকে কম, এর মধ্যে ৫ শতাংশের জীবনমান অনেক খারাপ। মূলত যাদের ভাই–বোন বেশি, যাদের বাড়িতে খাদ্য নিরাপত্তা কম, যারা বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপে ভুগছে তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান খারাপ।
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবনযাত্রার ভালোমানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে— সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালো আচরণ, কিশোর–কিশোরীদের ভালো মানসিক অবস্থা এবং তাদের সমস্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা।
এছাড়া গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের লবণাক্ত এলাকার মানুষের ৬১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অনেকের রক্তে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত একাধিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক কৈশোরকালীন জীবন মান; বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিসমূহ; যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য; চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষায় বিষয় বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ এবং কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা—বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘একশ জনে ৫২ জনের জীবনমান খারাপ থাকা অবশ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত-জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে এবং এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিনের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ কিশোর–কিশোরী। তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা করে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসাদের বেশিরভাগ কিশোরী।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান এর ‘যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য’ শীর্ষক গবেষণায় পাওয়া গেছে, পাউরুটি, কোমল পানীয়, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই এবং আচার পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে এমন উপাদান রয়েছে। যেমন—এসব খাবারে রয়েছে অতিরিক্ত লবণ, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, লেড, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিজয় কুমার পালের বিএসএমএমইউতে স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পেশা গঠনে বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের অনুপাত প্রায় সমান পর্যায়ে পেঁছেছে। কিন্তু বিশেষত্ব বাছাইয়ে জেন্ডার অনুযায়ী বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান পরিচালিত উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকি নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে উচ্চ লবণাক্ত এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর ৪০ শতাংশের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা পাওয়া গেছে।