চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বরখাস্ত; পরকীয়াই দায়ি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুলাই ২৬, ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বরখাস্ত; পরকীয়াই দায়ি!

সংগৃহীত ফাইল ছবি

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বদলে দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ওয়াং ই। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-কে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের স্বাক্ষরিত এক আদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

কিন গ্যাং ছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের খুবেই ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক দশক ধরে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেখান থেকে ৫৭ বছর বয়সে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। কিন ছিলেন চীনের আগ্রাসী কূটনীতির সমর্থক। এই কূটনীতিকে বলা হয়, ‍‍`উলফ ওয়ারিয়র‍‍` বো নেকড়ে যোদ্ধা।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নিয়োগ পাওয়ার পর মাত্র সাত মাসের মাথায় তাকে কেন সরিয়ে দেওয়া হলো।

গত জুন মাস থেকে কিন গ্যাংকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ইন্দোনেশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেখানে যাননি। ওই সময়  দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, অসুস্থতার জন্য তিনি যোগ দিতে পারেননি। তবে তার কী অসুখ হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জানায়নি মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিন সম্পর্কে তাদের কিছুই বলার নেই।

কিন গ্যাং কোথায় আছেন তা না জানানো এবং তাকে সরিয়ে দেয়ার পর জল্পনা তীব্র হয়েছে। এরই মধ্যে বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কের এক গুজব শোনা গেছে। আর এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। 

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই গুজবে বলা হয়,  ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও টেলিভিশনের একজন উপস্থাপিকার সঙ্গে ‘পরকীয়ায়’ জড়িয়েছেন তিনি। ওই উপস্থাপিকাও সামাজিক মাধ্যমে ছিলেন সক্রিয়। কিন্তু কিছু দিন ধরে তিনিও লাপাত্তা। ফলে ঠিক এক মাসের মাথায় কিন গ্যাংকে বরখাস্ত করার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন নেটিজেনরা।

মঙ্গলবার সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তাকে বরখাস্তের খবর জানায়। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্বে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন কিন গ্যাং। তবে গত একমাস ধরে তাকে সরকারি কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তার স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কী সমস্যায় ভুগছেন তিনি, তার কিছুই জানানো হয়নি। তিনিও এবিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। 

চীনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, এমন একাধিক বিশ্লেষক মনে করেন, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার বিরোধীপক্ষ নৈতিকতার কারণ দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকতে পারেন।  উপস্থাপিকার সঙ্গে যে সম্পর্ক তা চীনে বেআইনি নয়। কিন্তু একে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে দেখা হতে পারে।

কিন গ্যাংকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন স্বয়ং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গুরু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্লেষকরা তার দিকে নজর রাখছিলেন।  নতুন দায়িত্বে তিনি কতটা কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে পারেন। 

চীনের যেসব কূটনীতিক দেশটির সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন, তাদের পশ্চিমারা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।  চীনের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে যদি কাউকে গালি দেওয়ারও দরকার হয়, তাতেও তারা পিছপা হন না।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে যখন তিনি কাজ করতেন, সেই সময় থেকে চীনের সমর্থনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন কিন গ্যাং। পাশাপাশি তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যদের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেন। 

Link copied!