অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০২:২২ পিএম
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে গাজা শাসনব্যবস্থার খসড়া পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম উঠে এসেছে।
ব্লেয়ার, যিনি ব্রিটেনকে ইরাক যুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, ব্যবসা ও প্রভাব বিস্তার করছেন। এবার তাঁকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গাজায় এক অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রকাশিত খসড়া অনুযায়ী, গাজার জন্য প্রস্তাবিত প্রশাসনিক কাঠামোর শীর্ষে থাকবেন কোটিপতি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা, এবং নিচে থাকবেন যাচাই-বাছাই করা ফিলিস্তিনি প্রশাসকরা।
এই প্রশাসন ইসরায়েল, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, পরিকল্পনাটি হোয়াইট হাউসেরও সমর্থন পেয়েছে।
খসড়া অনুসারে, প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে একটি আন্তর্জাতিক বোর্ড। এই বোর্ডের হাতে থাকবে অন্তর্বর্তী সময়ে গাজার শাসনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আইনি ক্ষমতা। সম্ভাব্য চারজন বোর্ড সদস্যের নাম প্রকাশিত হয়েছে, যাঁদের মধ্যে কেউই ফিলিস্তিনি নয়।
তাদের মধ্যে একজন হলেন সিগ্রিড কাগ, যিনি জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার বিশেষ সমন্বয়ক। বাকি তিনজন হলেন মার্ক রোয়ান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট অর্থ লগ্নিকারী; নাগিব সাওয়ারিস, মিশরের কোটিপতি এবং টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ী; এবং আরি লাইটস্টোন, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস পিস ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী।
এদের মধ্যে আরি লাইটস্টোন মার্কিন ব্যবসায়ী ও র্যাবাই। তিনি গাজার হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সংস্থার ত্রাণকেন্দ্রে হামলার ফলে হাজারো মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস সংস্থাটিকে “ক্ষুধার জাল” ও “পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ” হিসেবে অভিহিত করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তিনি ইসরায়েলে মার্কিন দূত ডেভিড ফ্রিডম্যানের উপদেষ্টা ছিলেন এবং বর্তমানে ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের সহযোগী। এছাড়াও তিনি আব্রাহাম চুক্তির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নাগিব সাওয়ারিস মিশরের অন্যতম ধনকুবের, সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। তিনি মূলত টেলিযোগাযোগ এবং স্বর্ণ ব্যবসা থেকে অর্থ উপার্জন করেছেন। সাওয়ারিসের টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি ব্লেয়ারের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফর এবং প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন।
মার্ক রোয়ান, একজন ধনী অর্থ লগ্নিকারী এবং অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী, গাজার জন্য প্রস্তাবিত প্রশাসনিক বোর্ডের আরেকজন সম্ভাব্য সদস্য। তিনি ইসরায়েলের সমর্থক এবং গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ন্যায্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তালিকায় থাকা সবচেয়ে কম বিতর্কিত ব্যক্তি সিগ্রিড কাগ। তিনি ইউরোপীয় টেকনোক্র্যাট এবং নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিক। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গাজার জন্য জাতিসংঘের সিনিয়র মানবিক ও পুনর্গঠন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি গাজার ধ্বংসপ্রায় অবস্থা এবং মানুষের বিপর্যয়জনক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটি বিশ্ব বিবেকের কলঙ্ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এই খসড়া ফাঁস হওয়ার পর গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।