মোদীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিল হাইকোর্টের রায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম

মোদীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিল হাইকোর্টের রায়

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন কি না, তা রহস্যাবৃতই রইল। দিল্লি হাইকোর্ট গতকাল সোমবার এসংক্রান্ত এক মামলার রায়ে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্নাতকের ডিগ্রি প্রকাশে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য নয়।

একইভাবে সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা ঘিরে ওঠা প্রশ্নটিও রহস্যাবৃত রইল। দিল্লি হাইকোর্টের যে বিচারপতি মোদি মামলার রায় শোনান, সেই বিচারপতি সচিন দত্ত গতকাল জানান, ইরানির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশ করাও বাধ্যতামূলক নয়।

বিচারপতির যুক্তি, কোনো ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি ব্যক্তিগত তথ্যের আওতায় পড়ে। তা সর্বজনীন করা উচিত নয়। এই জাতীয় বিষয় তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতাভুক্ত নয়। এসব তথ্য ব্যক্তিগত।

নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ঘিরে নানা প্রশ্ন ১১ বছর ধরে মাঝেমাঝেই উঠে এসেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি জানতে মামলাও কম হয়নি। কিন্তু আজও সেই জিজ্ঞাসা বা রহস্যের কিনারা হলো না। এখনো জানা গেল না, দাবি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদী সত্যিই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন কি না।

সংশয় ও সন্দেহের কারণ মোদী নিজেই। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কৈশোরে গৃহত্যাগী হওয়ায় স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎই জানাজানি হয়, তিনি গুজরাট ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে স্নাতকোত্তর ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেই দুই ডিগ্রির প্রশংসাপত্রের অনুলিপিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই প্রশংসাপত্র ঘিরে জন্ম নেয় একাধিক প্রশ্ন, যার গ্রহণযোগ্য জবাব আজও কেউ দিতে পারেনি।

যেমন, নির্বাচনী হলফনামায় মোদী বলেছিলেন, ১৯৭৮ সালে বহিরাগত ছাত্র হিসেবে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’এ তৃতীয় ডিভিশনে বিএ পাস করেন। অথচ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নামে কোনো বিষয়ই কোনোকালে ছিল না। সে সময় ডিগ্রিধারীদের হাতে লেখা প্রশংসাপত্র দেওয়া হতো। অথচ মোদীর যে প্রশংসাপত্র সরকারের পক্ষে প্রচার করা হয়, তা ছিল ছাপানো। প্রশংসাপত্র ছাপার ক্ষেত্রে যে হরফ ব্যবহার করা হয়েছে, দেখা যায় তা ১৯৯২ সালে তৈরি। একইভাবে হলফনামায় তার দাবি ছিল, ১৯৮৩ সালে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করেছিলেন।

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির স্কুলের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল ঘিরেও এমনই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

মোদীর ডিগ্রি নিয়ে অনেকেই যেমন তথ্য জানার অধিকার আইনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তেমনই ইরানির স্কুলের ফল নিয়েও অনেকে ওই আইনের আশ্রয় নিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিইসি) সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়দের মোদীর ডিগ্রি ও সেন্ট্রাল বোর্ড অব স্কুল এডুকেশনকে (সিবিএসই) স্মৃতি ইরানির পরীক্ষার ফল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। তা মানতে রাজি হয়নি গুজরাট ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিবিএসই। ফলে একাধিক মামলা রুজু হয়।

গতকাল দিল্লি হাইকোর্ট দুই মামলারই রায় দিয়ে বলেন, কারও শিক্ষাগত প্রশংসাপত্র সেই ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিগত বিষয়, তা ছাড়া ডিগ্রি জানার অধিকার জনস্বার্থ বিষয়কও হতে পারে না। বিচারপতি সচিন দত্ত রায়ে এ কথাও বলেন, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলকও নয়।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ওই মামলায় সওয়াল করেছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেছিলেন, তথ্য কমিশনের নির্দেশ পালিত হলে হাজার হাজার পড়ুয়ার গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হবে।

মেহতা বলেন, আদালতের কাছে প্রয়োজনীয় নথি পেশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অসুবিধে নেই। কিন্তু যারা জনপ্রিয়তা অর্জনে ওই নথি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য তা প্রকাশ করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ নিরসনের চেষ্টা আগেও হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের কাছে। সেই দাবি মেনে সিইসি আইন অনুযায়ী গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে মোদীর স্নাতক ডিগ্রি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল।

তবে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে। ফলে কেজরিওয়াল গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য ছিল, কেজরিওয়ালের দাবি শিশুসুলভ। তার কৌতুহল জনস্বার্থের বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই দেওয়া আছে।

গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তি গুজরাট হাইকোর্ট মেনে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, হাইকোর্টের ‘মূল্যবান সময় নষ্টের’ কারণে কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানাও করা হয়েছিল।

Link copied!