চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছেন। তার চাঞ্চল্যকর সেই খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে আনারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার নিথর দেহ নিয়ে কয়েকজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী মিলে যে নির্মমতা ও পৈশাচিকতা চালিয়েছে, তার লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: নিজেকে সিয়াম পরিচয় দেওয়া সেই জিহাদ কলকাতায় গ্রেপ্তার
বিভিন্ন সংস্থার কাছে থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে হত্যার পর বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের মরদেহ থেকে প্রথমে চামড়া তুলে ফেলা হয়। পরে ওই মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করা হয়। হাড়-মাংস আলাদা করে মাংস কিমা করা হয়। পরে একাধিক প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে শহরজুড়ে যত্রতত্র অংশগুলো ফেলে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মুম্বাইয়ে কসাইয়ের কাজে জড়িত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের নিখুঁত পরিকল্পনা ও মরদেহ নিয়ে পৈশাচিকতা বর্ণনা উঠে আসে। তাকে আজ কলকাতার আদালতে তোলা হয়েছে।
সিআইডি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে বাংলাদেশি এমপিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরা করার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকার করেছেন জিহাদ।
আনারের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার কসাই জিহাদকে শুক্রবার (২৪ মে) কলকাতার বারাসাত আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পিত নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
বাংলাদেশি সংসদ সদস্যকে হত্যার পরে তার শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে ফেলে। মূলত পরিচয় নষ্টের জন্য ওই সংসদ সদস্যের মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেয়া হয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেয়া হয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান এমপি আনার হত্যার হোতা। আখতারুজ্জামানের নির্দেশে কলকাতার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে জিহাদ ও অন্য ৪ বাংলাদেশি শ্বাসরোধ করে আনারকে হত্যা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার এমপি আনার খুনের বিষয়টি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি নিউ টাউনের ফ্ল্যাটটিতে রক্তের দাগ ও বেশ কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগ পায়। এসব ব্যাগ দিয়ে আনারের দেহের খণ্ডবিখণ্ড অংশগুলো ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করছে সিআইডি।