ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নরকে এবার বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প, মার্কিন ইতিহাসে এমন নজির নেই

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২৫, ১১:৪৯ এএম

ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নরকে এবার বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প, মার্কিন ইতিহাসে এমন নজির নেই

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বন্ধকি ঋণ (মর্টগেজ) নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর বোর্ডের অন্যতম সদস্য লিসা কুককে বরখাস্ত করছেন তিনি।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তাই প্রেসিডেন্টের এ ধরনের পদক্ষেপ নজিরবিহীন। বিষয়টি আদালতে গড়ালে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা পরীক্ষা হতে পারে।

ট্রাম্প কুককে লেখা চিঠিতে বলেন, তাকে বরখাস্ত করার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অভিযোগ হলো, ২০২১ সালে মিশিগান ও জর্জিয়ার দুটি বাড়ির ওপর আলাদা বন্ধকি ঋণ নেন কুক। উভয় ক্ষেত্রেই কাগজপত্রে বাড়ি দুটিকে নিজের ‘প্রধান বাসস্থান’ হিসেবে দেখান তিনি।

কুককে ২০২২ সালে ফেডের বোর্ডে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক উইলিয়াম পুলটে কুকের বিষয়টি তোলেন এবং তদন্তের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে পাঠান। এর পর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে।

কুক বা ফেডের কর্তৃপক্ষকেউই রয়টার্সকে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নরদের মেয়াদ দীর্ঘ হয়, যা কোনো প্রেসিডেন্টের মেয়াদের সঙ্গে শেষ হয় না। কুকের মেয়াদ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত চলার কথা। তবে আইন অনুযায়ী, গুরুতর কারণে একজন গভর্নরকে সরানো সম্ভব।

কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপ আগে কখনো প্রেসিডেন্ট নেননি। বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ফেডকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতেই চেষ্টা করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতিতে মানুষের আস্থা ধরে রাখাই ছিল তাদের এমন চেষ্টার লক্ষ্য।

আইনবিশেষজ্ঞ ও ইতিহাসবিদেরা বলছেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে নানা জটিল প্রশ্ন উঠবে। যেমন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা, ফেডের বিশেষ কাঠামো, ইতিহাস। কুক আসলেই আইন ভেঙেছেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক হবে।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পিটার কন্টি-ব্রাউন বলেছেন, কুকের মর্টগেজসংক্রান্ত লেনদেন ছিল ফেডে যোগদান করার আগে। তার নিয়োগ সিনেটের অনুমোদনপ্রক্রিয়ায় থাকার সময় লেনদেনের বিষয়টি নথিবদ্ধ ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টদের বা সিনেটের অনুমোদনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব কর্মকর্তা ফেডে আসেন, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সব তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। তাই অতীতে গুরুতর অনিয়ম সংঘটনের অভিযোগ তুলে তাদের এখন অপসারণ করাটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

ট্রাম্প তার চিঠিতে কুকের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা ও অপরাধমূলক আর্থিক আচরণ’-এর অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, কুকের সততা ও যোগ্যতার ওপর তার আস্থা নেই।

‘এ ঘটনায় আর্থিক লেনদেনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা একজন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আপনার দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে,’ লিখেছেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ও ১৯১৩ সালের ফেডারেল রিজার্ভ আইনের অধীন কুককে বরখাস্তের ক্ষমতা তার আছে বলে দাবি করেন।

গত সপ্তাহে বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসার পর ট্রাম্প কুককে পদত্যাগ করতে বললেও তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন, তিনি ফেডে কাজ চালিয়ে যাবেন। উল্লেখ্য, কুক ফেডের পরিচালনা বোর্ডে স্থান পাওয়া প্রথম কোনো আফ্রিকান আমেরিকান সদস্য।

২০ আগস্ট কুক বলেন, ‘শুধু একটি টুইটের কারণে আমি পদ ছাড়ব না। তবে আমার আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব এবং যথাযথ তথ্য দিয়ে উত্তর দেব।’

এখনো পরিষ্কার নয়, এখান থেকে বিষয়টি কোন দিকে যাবে। আগে স্বাধীন সংস্থাগুলোর যেসব কর্মকর্তাকে ট্রাম্প বরখাস্ত করার চেষ্টা করেছেন, তারা নিজের খরচে আদালতে মামলা করেছেন। প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল ও অনিশ্চিত।

অর্থনৈতিক গবেষণা বারবার দেখিয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে ফেড যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে ফল ভালো হয়। কিন্তু ট্রাম্পের পদক্ষেপে সেই নীতিকে এখন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে।

এসজিএইচ ম্যাক্রো অ্যাডভাইজর্সের টিম ডুই বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে, এই প্রশাসন ফেডকে নতুনভাবে সাজাতে চায় এবং বাইডেন নিযুক্ত অন্যদের জন্য তা সতর্কবার্তা। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ফেড অক্ষত ছিল, এবার তা আর নাও হতে পারে।’

Link copied!