বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর ক্ষেপেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি সপ্তাহের শনিবার শেখ হাসিনার সঙ্গে ১০টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের নবীকরণকে ‘বাংলা বিক্রির পরিকল্পনা’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যকে এড়িয়ে ও দেশের (ভারত) স্বার্থহানি হয় এমন কিছু সহ্য করা হবে না।
বাংলাকে বাদ দিয়েই ফরাক্কা-গঙ্গা চুক্তি নবীকরণ হয়েছে। আমরা এই চুক্তির অংশ। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের বকেয়াও দেওয়া হয়নি। গঙ্গায় ড্রেজিং বন্ধ থাকায় বন্যা ও ভাঙন হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে এটা বাংলা বিক্রির চক্রান্ত।
- ডেরেক ও’ব্রায়েন
তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য
ফারাক্কা ও গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও অংশীদার। কিন্তু নবীকরণের বিষয়টা রাজ্য সরকারকে আগে থেকে অবহিত করা হয়নি। এটা খুবই খারাপ কথা। সেই সঙ্গে এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের পাওনাও বকেয়া আছে। বন্ধ হয়ে গেছে গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ। এটাকে পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও নদী ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। তাতে একাধিক রাজ্য সরকারকেও অংশীদার করা হয়। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বলছে, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার একাংশে গঙ্গা নদীতে ভাঙন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২০২২ সালে চিঠি লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে মমতাও বলেছিলেন, ফারাক্কা ব্যারেজের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙনের মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে ভিটেমাটি হারানোর পাশাপাশি ওই এলাকার বাসিন্দাদের চাষেরও ক্ষতি হচ্ছে।
এ সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, ভারতীয় সংবিধানের ২৫৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি, চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। কিন্তু আন্তঃসীমান্ত জল-চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সহযোগিতা জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের ‘আপত্তির’ কারণে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সম্পাদিত না হওয়ার প্রসঙ্গটি চর্চায় রয়েছে। এমনকি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময়েও রাজ্যের স্বার্থেই তিস্তা-সমস্যার তড়িঘড়ি সমাধান যে সম্ভব নয়, সে কথা খোদ শেখ হাসিনাকে জানান মমতা।
এদিকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা বক্তব্য, “বিষয়টি দুই দেশের পররাষ্ট্র নীতির ওপর নির্ভর করছে। এই নিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের নীতির বিরোধিতা করা কোনও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না।”
বিজেপি-তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যখনই কোনও আলোচনা হয়েছে, তখনই রাজ্য সরকার রাজি নয় বলে সেটা আটকে গেছে। আরএসএসের নির্দেশে কেন্দ্র চলে। আরএসএস বলে দিয়েছে, মমতা-মোদিকে একসঙ্গে চলতে হবে।”
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা