এবার ব্রিটেনের এমপি পদও ছাড়লেন বরিস জনসন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ১০, ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম

এবার ব্রিটেনের এমপি পদও ছাড়লেন বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। করোনা মহামারি চলাকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় সরকারিভাবে জারি করা করোনাবিধি লঙ্ঘনজনিত কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জেরে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেন।  

ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স ও মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।   

সম্প্রতি এক তদন্ত প্রতিবেদনে হাউস অব কমন্স থেকে বরিস জনসনকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের জেরে বরিস জনসন  সংসদ সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বরিস দাবি করেন, কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এমন একটি প্রমাণও হাজির করতে সক্ষম হয়নি যাতে প্রমাণ হয় যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে হাউস অব কমনসকে (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) বিভ্রান্ত করেছেন।“ ওই প্রতিবেদন অসত্য ও পক্ষপাতে পরিপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তবে ওই তদন্ত কার্যক্রমকে তার অপসারণ চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পদত্যাগ করার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিস জনসন বলেন, ‘ব্রেক্সিটের প্রতিশোধ নিতে এবং তলে তলে মূলত ২০১৬ সালের গণভোটের ফল পাল্টে দিতে এসব আয়োজন চলছে।’ 

এক বিবৃতিতে ঋষি সুনাক সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন বরিস জনসন। ওই বিবৃতিতে সরকারের বিরুদ্ধে ট্যাক্স বৃদ্ধি ও ব্রেক্সিট ঠিকঠাকমতো কার্যকর করে তুলতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন তিনি।

রাজনীতিতে আবারও ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্তত এই মুহূর্তে পার্লামেন্ট ছাড়তে হচ্ছে, এজন্য আমি অত্যন্ত দু:খিত।”

তিনি আরও বলেন, “ তবে আমি আতঙ্কিত যে আমাকে অগণতান্ত্রিকভাবে একটি তীব্র পক্ষপাতমূলক কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জোর করে বহিষ্কার করা হতে পারে।”

গত বছর লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বরিস জনসন ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের (বর্তমানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে, তারা কোভিড-১৯ লকডাউন চলাকালে ডাউনিং স্ট্রিটে একটি পার্টিতে অংশ নেন। দুজনকে এ ঘটনায় জরিমানাও করা হয়। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হন।

এর আগে,  ২০২২ সালের মার্চে বরিস তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেনে যে, করোনাবিধি উপেক্ষা করে বন্ধুদের নিয়ে পানাহারের আয়োজন করার বিষয়ে তিনি পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন। তবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেননি বলেও জানান।

করোনা মহামারির কারণে যখন ব্রিটেনজুড়ে লকডাউন চলছিল এবং গণজমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল তখন করোনাবিধি ভেঙে নিজের সরকারি বাসভবনে একাধিক পার্টিতে যোগদানের অভিযোগ ছিল সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে  এনিয়ে তাকে ব্যাপক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এসব পার্টির খবর প্রকাশের ঘটনা ওইসময় জনসন সরকারের জন্য বড় ধরনের কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়।এ বিষয়টিই ‘পার্টি গেট কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিত।

এই ‘পার্টি গেট কেলেঙ্কারি’র জেরে বরিস জনসনকে ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হয়।

ব্রেক্সিট জটিলতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানালে বরিস জনসন রক্ষণশীল দলের নেতৃত্বের দৌড়ে অংশ নেন এবং ২৩ জুলাই ২০১৯ দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। এর পরের দিন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, বরিস জনসন ব্রিটিশ রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তার সমর্থকগণ তাকে একজন বিনোদনমূলক, হাস্যরসাত্মক, এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রশংসা করেন। তার গ্রহণযোগ্যতা প্রথাগত রক্ষণশীল ভোটারদের পাশাপাশি অন্যদেরকেও আকর্ষণ করে। অপরদিকে বাম ও ডানপন্থী উভয় পক্ষ-ই অভিজাত্যবাদ, অসসততা, অলসতা, বর্ণবাদ ও সমকামীতাবিরোধী মন্তব্যের জন্য সমালোচনা করেন।

Link copied!