‘তোতলামি’ বলতে আমরা কথা বলার স্বাভাবিকতার ছন্দপতনকেই বুঝি। যাদের এই সমস্যাটি রয়েছে তারা যা বলতে চান নিজেরা ঠিকই জানেন কিন্তু বলতে গেলে সঠিক শব্দটা কিছুতেই বের হতে চায় না।
একটা শব্দ বা কথা বারবার বেরোতে থাকে। এ কারণে তারা নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন জনসমাজ থেকে। অনেকে কিছু শব্দ এড়িয়ে যান। প্রয়োজন হলেও সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চান না।
তবে এটা জেনে আপনি অবাক হবেন যে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদেরই তোতলামির সমস্যা রয়েছে। যাদের মধ্যে আছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন, মেরিলিন মনরো, মিস্টার বিন, মার্লন ব্র্যান্ডো, হৃত্বিক রোশনসহ আরও অনেকে। তবে নিজেদের এই সমস্যা এড়িয়েই তারা হয়েছেন বিখ্যাত।
চলুন জেনে নেয়া যাক তোতলামিকে দূরে সরিয়ে পরিশ্রমকে আপন করে সাফল্য পেয়েছেন যারা তাদের গল্প:
১.মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন: তোতলামির সমস্যায় ভুগেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনও। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপতির বিতর্কের আগে তাঁকে পরামর্শও দেয়া হয়েছিল যে এই সমস্যা তার কর্মদক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
কিন্তু জো বাইডেনকে তার কোনো সমস্যাই আটকে রাখতে পারেননি। তোতলামির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাইডেন তার শৈশবের বেডরুমে আয়নার সামনে ক্লাসিক সাহিত্য আবৃত্তি করতেন।
২.মিস্টার বিন খ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসন : ‘মি. বিন’ রোয়ান অ্যাটকিনসনেরও তোতলামির সমস্যা ছিল। কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া রোয়ান প্রচণ্ড পরিশ্রমী আর মেধাবী ছিলেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই প্রথম অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়।
অনেকগুলো টিভি শো তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেয়। এতকিছুর পরও, নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি রোয়ান। ১৯৯০ সালে ১৪ পর্বের হাস্যরসাত্মক ব্রিটিশ টিভি ধারাবাহিক ‘মি. বিন’ নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন।
প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে। মি. বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন । টানা বিশ বছর এই চরিত্রে অভিনয় করেন রোয়ান।
৩.মেরিলিন মনরো: হলিউডের জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী, মডেল ও সঙ্গীতশিল্পী বিউটি কুইন মেরিলিন মনরো, অভিনয় করেছেন ৩০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে। ‘৫০ এর দশকের স্বর্ণকেশী লাস্যময়ী এ অভিনেত্রীরও ছোটবেলা থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তোতলামির সমস্যা ছিল।
পরবর্তীতে তোতলামির সমস্যা কেটে গেলেও ‘সামথিংস গট টু গিভ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তিনি স্ট্রেসের কারণে ফের তোতলাতে থাকেন। ১৬ বছর ধরে স্পিচ থেরাপিস্টদের সাহায্য নিয়েও তোতলামি না সারায় নিজ চেষ্টায় তোতলামি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন মনরো।
৪. মার্লন ব্র্যান্ডো: অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডো কথা বলার শৈলীর জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন। এই চলচ্চিত্র অভিনেতাও তোতলামি সমস্যায় ভুগেছিলেন। ‘দ্য গডফাদার’ এবং ‘এ স্ট্রীটকার নেমড ডিজায়ার’- চলচ্চিত্রেও তোতলামির সমস্যাটি অভিনয়ে দেখান তিনি।
৫. ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট: হলিউডের গ্লোবাল স্টার অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। টোয়াইলাইট সিরিজ থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে এখন তার ভক্তের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে। ক্রিস্টেনও তোতলামির সমস্যায় ভুগছেন। অনেক ইন্টারভিউর সময় তার এ সমস্যাটি ধরা পড়েছে।
৬. হৃত্বিক রোশন: বলিউডের হার্টথ্রব নায়ক হৃত্বিক রোশন ছোটবেলায় তোতলা ছিলেন। এ কারণে স্কুলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে স্পিচ থেরাপিও নিতে হয়েছিল তাঁকে।
৭. শরদ কেলকার:তোতলামির সমস্যায় ছোট বেলা থেকেই ভুগছিলেন শরদ। যখনই কিছু বলতে যেতেন শুরুতেই তাঁকে থামিয়ে দিতেন বন্ধুরা। তোতলামির সমস্যার জন্য প্রথম দিকে অনেক পরিচালকই তাঁকে নিতে চাইতেন না।
একতা কাপুরও তাঁকে এক সিরিয়ালের মাঝপথ থেকে বার করে দিয়েছিলেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যা করার দরকার করেছেন শরদ। বাহুবলী ১ ও ২ এ শিবা এবং অমরেন্দ্র বাহুবলীর চরিত্রসহ বহু বিখ্যাত হিন্দি চরিত্রে ডাবিংও করেছেন তিনি।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবন থেকেই বোঝা গেল তোতলামি সমস্যাটি জীবনের একটি ছোট্ট অংশ মাত্র, একটুখানি পরিশ্রম এই সমস্যা থেকে দিবে মুক্তি আর জীবনে নিয়ে আসবে সাফল্য। এবার ভেবে নিন সাফল্যকে আপন করতে পরিশ্রম করবেন না কি সবার থেকে গুটিয়ে রাখবেন নিজেকে।