দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষার পর অবশেষে ৫৫ বছর বয়সে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন এক নারী, তাও আবার একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিয়ে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা প্রদেশের এর্নাকুলাম জেলার সিসি নামে এক নারী সম্প্রতি ৫৫ বছর বয়সে ২টি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
সিসির ঘটনায় হয়তো অনেকের ‘বাধাই হো’ সিনেমার কথা মনে পড়ে যাবে। ওই সিনেমায় বৃদ্ধা বয়সে অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, যা নিয়ে সমাজে হুলস্থুল পড়ে যায়। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং সমাজের কাছে তাঁরা কৌতূকের বিষয় হয়ে ওঠেন।
অমিত রবীন্দ্রনাথ শর্মা পরিচালিত ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ওই ছবিটিতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা নীনা গুপ্তার প্রেগনেন্ট হওয়ার খবরে দুই ছেলে খুব বিব্রত হয়। তারা তাদের বাবা-মা, বন্ধু ও সমাজকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। এমনকি লজ্জায় ও কষ্টে নীনা গুপ্তের এক ছেলে তার প্রেমিকের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা শুরু করেন।
সিসির ক্ষেত্রে এরকম হুবহু না ঘটলেও আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশিদের হাসি আর কৌতুকের খোরাকে পরিণত হন। তবে দমে যাননি সিসি। অভিনেত্রী নীনা গুপ্তের মতো সিদ্ধান্তে ও সংকল্পে অটল থাকেন তিনি।
ছবিতে পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সী নীনা গুপ্ত এক সন্তানের জন্ম দিলেও কেরালার সিসি জন্ম দিয়েছেন তিন সন্তানের। সিসির বরাত দিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, বিয়ের দুবছর পর থেকেই সন্তান ধারণের চেষ্টা করে আসছেন সিসি। কিন্তু যখন কিছুই সম্ভব হচ্ছিল না তখন তিনি ডাক্তার দেখান। অনেক চিকিৎসার পরেও তিনি সন্তান ধারণে সক্ষম হন না।
এই ভাবেই ৩৫ বছর কেটে যায় সিসির। হঠাৎ একদিন তার ভীষণ ব্লিডিং হওয়া শুরু হয়। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে জরায়ু বাদ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি এতে ভেঙে পড়েন। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর জন্য এই কঠিন ডিসিশন তাদের নিতে হয়। চার মাস ধরে তার ট্রিটমেন্ট চলে।
তারপর হঠাৎ একদিন তিনি জানতে পারেন তার গর্ভে সন্তান আসার কথা। এরপর সব রকম টেস্ট করালে আরো শিওর হয়ে যান তারা। এরপরের নয় মাস কষ্ট আর আনন্দের সংমিশ্রণে কেটেছে তার। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে সমস্ত পরিবর্তন আসে তা তিনি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছিলেন।
এরপর সেই বহু প্রতীক্ষিত দিনটি আসে এবং ৩৫ বছর অপেক্ষার পর একসাথে তিন সন্তানের জন্ম দেন সিসি। ৫৫ বছর বয়সে এসে তার এত বছরের স্বপ্ন পূরণ হবে তা কখনও তিনি ভাবেন নি। আজ যখন তার এই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তিনি সত্যিই আপ্লুত। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডাক্তারদের এবং ভগবান কে।
তিন সন্তানের গর্তি মা সিসি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে এক চিকিৎসকের পরামর্শেই আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসি।৫৫ বছরে মা হওয়া ইশ্বরের উপহার ছাড়া আর কি হকে পারে। যারা মা হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন আমি বলব আশা ছাড়বেন না এবং চিকিৎসা বন্ধ করবেন না।’
সিসি আরও বলেন, সন্তান ধারণের জন্য অনেক মন্দির ও হাসপাতাল ঘুরেও যখন কিছুই হয় না সেই সময় এক মেয়ের উপর দিয়ে কি যায় তা বোঝানো সম্ভব নয়। তিনি আরো জানান, আজ তাদের প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তা শুনেছেন, এত বছরের কষ্ট আর পরিশ্রমের মূল্য তারা পেয়েছেন।