পৃথিবীতে প্রাণিজগতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিত্যনতুন ফলাফল রীতিমতো চমকে দেয় আমাদের। তাইতো জনপ্রিয় ও সুস্বাদু কোরাল মাছের একটি বৈশিষ্ট্যও মৎস্যবিজ্ঞানীদের কৌতূহলী করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, কোরাল মাছ জন্মায় উভয়লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে। এরপর পুরুষ হিসেবে বাড়ে। আর বয়সকালে পরিণত হয় নারীতে। যদিও এই রূপান্তর কীভাবে ঘটে, বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো তা পরিষ্কার নয়।
তবে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীর লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোজমের ভূমিকা প্রধান হলেও মাছের ক্ষেত্রে তা নয়। অর্থাৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা জন্মের সময় যে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে পৃথিবীতে আসে, সচরাচর সেটাই তার আজীবন লৈঙ্গিক পরিচয় হয়ে রয়ে যায়।
তবে মাছের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে না। উষ্ণ পানির অধিকাংশ মাছই জন্মায় পুরুষ হয়ে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ধারণে তাপমাত্রাও ভূমিকা রাখে। যুক্তরাজ্যের স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞানী অধ্যাপক স্টিফানো মারিয়ানি দীর্ঘদিন ধরে মাছের এই অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তাঁর মতে, লিঙ্গ পরিবর্তনে মাছের পারদর্শিতা প্রাণিজগতে সবাইকে ছাপিয়ে যায়। গবেষণায় তিনি দেখতে পেয়েছেন, মাছেরা নিজেদের অ্যান্ড্রোজেন হরমোনকে দ্রুতই অ্যাসট্রোজেনিক হরমোনে রূপান্তর করতে পারে। যার ফলে তারা নিজেদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে।
বাংলাদেশে কোরাল মাছের ওপর প্রথম গবেষণা হয়েছিল ২০১৮ । গবেষকেরা বলেন, কোরাল মাছ প্রথমে
উভলিঙ্গ হয়ে জন্মায়। এরপর পুরুষ হয়।
আর চার কেজির বেশি ওজন হলে অধিকাংশ কোরাল স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়। রূপান্তরিত হওয়ার পরই স্ত্রী কোরাল প্রজননের জন্য গভীর সাগর থেকে উপকূলের নদী মোহনায় চলে আসে।
কোরাল মাছের প্রজননকাল এপ্রিল থেকে শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় মে মাসে। একটি পরিপক্ব স্ত্রী কোরাল মাছ ৬০ লাখ থেকে ২ কোটি পর্যন্ত ডিম দিতে সক্ষম।
সমুদ্রে উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে কোরাল মাছ পুরুষেই থেকে যায়। এর অন্যতম কারণ পরিবেশ না থাকলে পুরুষ কোরালের শুক্রাণু প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
জীবনের শুরুতে এরা হারমোফ্রোডাইট (উভলিঙ্গ) থাকে। ওজন যখন ২০০ গ্রাম হয়, তখন সবাই পুরুষ জাতের হয়। তিন কেজি ওজন পর্যন্ত কোরাল পুরুষ থাকে।
ওজন যখন চার কেজির বেশি হয়, তখন পুরুষ কোরাল আপনা-আপনি স্ত্রী জাতে রূপান্তর ঘটে। এ কারণে পূর্ণবয়স্ক কোরালের মধ্যে পুরুষ কোরালের সংখ্যা অনেক কম।
কিন্তু কোরাল পুরুষ হয়ে জন্মায় কেন এবং পুরুষ থেকে স্ত্রী জাতে রূপান্তর কেন ঘটে, এ নিয়ে বিশদ গবেষণা হয়নি।