পাগলার মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ৫ কোটি টাকা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৭, ২০২৩, ০১:২৫ এএম

পাগলার মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ৫ কোটি টাকা!

চার মাস আগে গত জানুয়ারিতে দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। তারপর আবার মে মাসে দানবাক্স খুলে মিললো ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। শুধু টাকা নয় এর সাথে ছিল বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৮টি দানবাক্সের টাকা গণনা করে এই রেকর্ড পরিমাণ অর্থের খোঁজ পাওয়া গেল।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ টাকা গণনা করা হয়।

এর আগে, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর ৩ মাস ১ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হলে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। 

মানুষের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ পাগলা মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয় বলে জানান মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি খলিলুর রহমান।

টাকা গণনার কাজে অংশ নেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরীন তারিন, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছিল পাগলা মসজিদ। বর্তমানে প্রায় ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে মসজিদ এলাকা। শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে এই মসজিদটি অন্যতম।

বর্তমানে এ মসজিদের খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যের সাথে বেড়েছে পরিধিও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও। পাশাপাশি ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানে ৬০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

জনশ্রুতি আছে, কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে এক কালে এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধক বাস করতেন। তাঁর কাছে মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজন আসতো। তাঁর মৃত্যুর পর সে স্থানটিকে পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এলাকাবাসী।

পরবর্তীতে মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ মানত করতে আসেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন তারা।

বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা নানা বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

Link copied!