জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করার ভাবনা এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের অনেক প্রস্তাবকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, এ ধরনের সংস্কার প্রস্তাব জটিলতা বাড়াবে। এ ছাড়া এত দিন পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ তৈরির উদ্যোগকেও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে এর কোনো প্রয়োজন নেই। খবর প্রথম আলো।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সূত্রে জানা গেছে, সভায় মূলত দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। এর একটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র, অন্যটি সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন। বিএনপি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে সরকারের দিক থেকে শিগগির সংলাপের আশা করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সর্বদলীয় বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। স্থায়ী কমিটির সভায় তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন। সর্বদলীয় বৈঠকে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, যেকোনো গণ-অভ্যুত্থান, গণ-আন্দোলনের দলিল প্রণয়নে রাজনৈতিক মতৈক্য গুরুত্বপূর্ণ। সে সঙ্গে এর আইনি ভিত্তি কী হবে, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এত দিন পর কেন এই উদ্যোগ, সর্বদলীয় বৈঠকে সেটাও তিনি জানতে চেয়েছেন বলে স্থায়ী কমিটির সভায় জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা গণ-অভ্যুত্থানের সাড়ে পাঁচ মাস পরে ‘ঘোষণাপত্র’ তৈরির উদ্যোগকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ মনে করেন। যদি সে সময় এ ধরনের কোনো ঘোষণা আসত, তখন হয়তো এ বিষয়ে একটা রাজনৈতিক মতৈক্য তৈরি হতে পারত। সভায় এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও দেশ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করতে তাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরেও দেশে বিতর্ক সৃষ্টির নানা চেষ্টা আছে। সংবিধান বাতিল করার দাবি এসেছে। এর পরপরই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। রাজনৈতিক মতৈক্য না হলে এটিও একধরনের বিতর্ক-বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।
স্থায়ী কমিটিরে সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, সময়ের চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে তারা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এটিই সংস্কারের বড় দলিল। এর বাইরে বিএনপি সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনকে সহযোগিতা করতে নিজেরাও দলীয়ভাবে ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার আনা যেতে পারে, সে ব্যাপারে তারা ইতিমধ্যে কমিশনের কাছে প্রস্তাবগুলো জমাও দিয়েছে। বিএনপি আশা করছে, বিভিন্ন কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকার শিগগিরই একটি রাজনৈতিক সংলাপ আহ্বান করবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবগুলো গৃহীত হবে।
এদিকে দেশের পুরোনো চারটি বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে চারটি প্রদেশ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ব্যবস্থাপনা প্রদেশের হাতে দেওয়ার পক্ষে কমিশন। স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা বাংলাদেশে এর কোনো বাস্তবতা নেই বলে মনে করেন, বরং এতে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একটা পর্যায়ে তা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের উদাহরণ আছে।
অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। দলে আলোচনা হবে, পর্যবেক্ষণ হবে, তারপর আমরা এ বিষয়ে কথা বলব।’
জানা গেছে, সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরনগঞ্জ সীমান্তে সংঘর্ষ, বিএসএফের গুলি; বাংলাদেশিকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা; দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া; সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত একটি গ্রাফিতি বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্ক ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।