আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিতর্ককে নির্বাচন পেছানোর কৌশল হিসেবে দেখছে বিএনপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৩, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিতর্ককে নির্বাচন পেছানোর কৌশল হিসেবে দেখছে বিএনপি

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্যরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে আহ্বান জানিয়েছে এবং এটাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক উসকে দেওয়া হয়েছে, একে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি কৌশল হিসেবে দেখছে বিএনপি।

দলটির নেতারা বলছেন, এটা সামরিক বাহিনী ও জনগণের মধ্যে উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ।

এ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার “আ. লীগ নিষিদ্ধের বিতর্ককে নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত মনে করে বিএনপি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ভারতের ইশারায় আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি দাবি করেন, ক্যান্টনমেন্টে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’কে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

হাসনাতের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তোলে।

বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। কিন্তু, সরকারি আদেশ বা রাজনৈতিক চাপে ফেলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা উচিত না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্তের পক্ষে নই, যা জাতীয় স্থিতিশীলতা ও সংহতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত এবং সেটা অবশ্যই জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত। কিন্তু, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আদালত নেবে।’

সালাহউদ্দিন একইসঙ্গে সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আইনি সংশোধনের পরিকল্পনা করা হলেও পরে সরকার তা থেকে সরে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘তার বদলে সরকার পুলিশি দমন-পীড়নের মাধ্যমে দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দমন করার পথ বেছে নিয়েছে।’

বিএনপির মতে, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিবাদী রাজনীতি’কে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগ তাদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেনি বা ক্ষমা চায়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই কোনো দল নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে সমর্থন দেওয়া আমাদের নীতি পরিপন্থী।’

বিএনপির নেতারা সতর্ক করে বলেন, এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা এবং সামরিক বাহিনীকে এ ধরনের বিতর্কে টেনে আনা হলে দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে। যার ফলে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা কঠিন হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি মূলত দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার একটি প্রচেষ্টা।’

তিনি বলেন, ‘একটি মহল সামরিক বাহিনীকে বিতর্কিত করে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। আমরা এটা সমর্থন করতে পারি না।’

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে ফেলতে একের পর এক রাজনৈতিক সংকট তৈরি করছে এনসিপি।

বিএনপি বিশ্বাস করে, সরকারি আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলে সেটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি এ বিষয়ে কথা না বললেও, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করেছেনআগের সরকারের পলাতক সহযোগীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ যেন না দেওয়া হয়।

এক ইফতার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ, ছোটখাটো বিষয়গুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বড় করে দেখানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। সাবেক স্বৈরশাসকের দোসররা এখনো হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা অর্থ নিজেদের হাতে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তাদেরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে।’

একই অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে আমাদের দায়িত্বশীলভাবে কাজ করা উচিত। যারা রাজনীতি করেন, বিভিন্ন পেশায় আছেন, সরকার ও জনগণের সঙ্গে যুক্তসবাইকে এমনভাবে কথা বলা ও কাজ করা উচিত, যা গণতান্ত্রিক অগ্রগতির পথ সহজ করবে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যদি আওয়ামী লীগে এমন নেতৃত্ব আসে, যারা অপরাধে জড়িত নয়, ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত নয়, অর্থ আত্মসাৎ বা পাচার করেনিতাহলে আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?’

তিনি বলেন, ‘যদি দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হয়, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয় এবং জনগণ আওয়ামী লীগকে গ্রহণ করে, তাহলে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।’

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই।

‘দলটির যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, বিশেষত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচার চলবে,’ যোগ করেন তিনি।

Link copied!