জুন ২১, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
অর্থনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের বিরোধিতাকারীদের ‘প্রতিহত’ করার আহ্বানকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।
তিনি এই মন্তব্যকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক ভাষা’ বলে আখ্যা দেন। সম্প্রতি নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই ‘প্রতিহত’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় আনু মুহাম্মদ বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে দেশীয় কোম্পানিগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে টার্মিনালটি পরিচালনা করে আসছে। বার্ষিক এক মিলিয়ন কনটেইনার ওঠানামার সক্ষমতার এই টার্মিনালে বর্তমানে বছরে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার পরিচালিত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, কেন এই প্রক্রিয়ায় খোলামেলা টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না এবং কেন সরকার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব গোপনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) নামে ‘জিটুজি’ ভিত্তিতে দিতে যাচ্ছে।
আনু মুহাম্মদ জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মিলে একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মঞ্চ গঠন করা হয়েছে এবং এই ইজারা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ২৭ ও ২৮ জুন রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের বড় প্রকল্প যেমন রামপাল ও রূপপুরের ক্ষেত্রেও একইভাবে ‘প্রশ্ন তোলা নিষেধ’ ধরণের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল। তখন বলা হতো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন, কোনো সমস্যা হবে না। এখন একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষের লোকজন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা বিশ্বব্যাংকের মতামতের অজুহাতে টেন্ডার ছাড়া বিদেশি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো এমন স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি সতর্ক করেন, দায়িত্বশীল সরকার না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার বাইরে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, চীন বা মালয়েশিয়ার মতো দেশে বিদেশি বিনিয়োগ হয় কঠোর শর্ত ও জবাবদিহির আওতায়।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, কল্লোল মোস্তফা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক শ্রমিক নেতা শেখ নুরুল্লা বাহার।