সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৬, ২০২৩, ১২:৪১ পিএম

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল জলিলের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আব্দুল জলিল, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে দেশ ও আওয়ামী লীগের জন্য তাঁর অবদান ছিল অসামান্য।

আব্দুল জলিল ১৯৩৯ সালের ২১ জানুয়ারি নওগাঁ জেলার সদর উপজেলার চকপ্রাণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। এরপর ১৯৬৩ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য লন্ডনে যান। 

দেশে যখন স্বাধীনতার সংগ্রাম জোরদার হতে থাকে তখন আব্দুল জলিল লন্ডনে ছিলেন। পড়াশোনা শেষ না করেই ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তিনি লন্ডনের লিঁঙ্কনস ইন-এ আইন বিষয়ে পড়াশুনা করছিলেন। আব্দুল জলিল সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলে আব্দুল জলিল নওগাঁ তথা উত্তরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের একীভূত করতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে নওগাঁ থেকে ৭৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর দলবল নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।

এরপর বালুরঘাটে আত্রাই নদীর পূর্বতীরে শশ্মানকালী মন্দিরের পার্শ্বে একটি গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখান থেকে বাঙ্গালীপুর, মধুপুর, কামাড়পাড়া, প্যারিলাসহ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন। ঐসব ক্যাম্প থেকে হায়ার ট্রেনিং এর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের শিলিগুড়ির পানিঘাটায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুল জলিল।

নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে উত্তরাঞ্চলের জেনারেল হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেন। নওগাঁ শহরের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে আব্দুল জলিল চত্বরে তাঁর প্রচেষ্টার নির্মিত হয় ৭১ ফুট উঁচু বিজয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। 

আব্দুল জলিল ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। তাঁর অন্যতম পরিচয় ছিল ‘নওগাঁর জলিল’ হিসেবে। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭নং সেক্টরের প্রধান সংগঠক ও যোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে তিনি নওগাঁ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, বাকশাল গঠিত হলে আব্দুল জলিলকে নওগাঁর গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ৪ বছর পর ১৯৭৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৮১ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক করা হয়। ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারি করা হলে তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৩ সালে তাঁকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন কিডনির হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন বাংলাদেশের এই সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল তাঁর। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ তাঁর হৃৎপিণ্ডে পুনরায় অস্ত্রোপচার করা হয়। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চলা অস্ত্রোপচারটি সফল  হলেও বৃক্কে ডায়ালাইসিসজনিত জটিলতায় ৬ মার্চ ভোর থেকে তাঁর শারীরিক অবনতি ঘটতে থাকে। তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সময় সাড়ে ছয়টায় ৭৪ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নানা আয়োজন ও কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হবে দিনটি তাঁর গ্রামের বাড়ি চকপ্রাণ মহল্লায়। সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।

Link copied!