স্যামসাংয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১০, ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম

স্যামসাংয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কোম্পানি স্যামসাং ইলেকট্রনিকসে চলমান ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে বলে জানানো হয়েছে। শুরুতে তিন দিনের জন্য ধর্মঘট ডাকা হলেও আজ বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক সংগঠন জানিয়েছে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দর-কষাকষির টেবিলে আনতে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়া হবে। এই ট্রেড ইউনিয়নটি হাজার হাজার শ্রমিককে প্রতিনিধিত্ব করে।

বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যানুযায়ী, বিশাল এই প্রযুক্তি কোম্পানির ইতিহাসে চলমান ধর্মঘট সবচেয়ে বড় শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা। চিপ তৈরির এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়াতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মাত্র গত সপ্তাহেই জানিয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তারা বিপুল পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করতে যাচ্ছে।

ন্যাশনাল স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ জুলাইয়ের ১০ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দ্বিতীয় সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছি। আলোচনা করতে কর্তৃপক্ষের কোনো ইচ্ছা নেই  জানার পর আমরা এই ধর্মঘট ডেকেছি।’

ধর্মঘট শুরু হয় গত সোমবারে। সেদিন পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দেন। বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে লড়াই চলছে, তারই অংশ হিসেবে এই ধর্মঘট ডাকা হয়। শুরুতে ঠিক করা হয়েছিল যে ধর্মঘট তিন দিন চলবে।

স্যামসাংয়ে অনেক দিন ধরেই কোনো ট্রেড ইউনিয়ন ছিল না। এরপর জুনে প্রথমবারের মতো শ্রমিকেরা এক দিনের জন্য ধর্মঘট করে। ইউনিয়নের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কোম্পানিতে যত শ্রমিক আছেন তার এক-পঞ্চমাংশের বেশি এই ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য।

কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্যামসাং ইলেকট্রনিকস এটা নিশ্চিত করবে যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ইউনিয়নের সঙ্গে সরল বিশ্বাসে দর-কষাকষি করতে কোম্পানি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে ওই মুখপাত্র জানান।

তবে ইউনিয়ন বলছে, উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে বলে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে। যত বেশি সময় ধরে ধর্মঘট চলবে, ততই কর্তৃপক্ষকে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

আরও বেশি শ্রমিককে ধর্মঘটে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়ে ইউনিয়ন বলে, ‘শেষ পর্যন্ত তারা পরাজয় মেনে আলোচনার টেবিলে আসবে। জয় সম্পর্কে আমরা আশাবাদী।’

 

সমস্যা হবে না

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেমোরি চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। এ ছাড়া জেনারেটিভ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহার হয়, এমন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চিপের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সরবরাহ করে এই কোম্পানি।

কিন্তু সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বহুলাংশেই যন্ত্রপাতিনির্ভর এবং এতে মানুষের শ্রমের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। সে কারণে ধর্মঘটের বড় কোনো প্রভাব এই শিল্পে পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে। তাইপেভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ট্রেন্ডফোর্সের বিশ্লেষক আরভিল উ এএফপিকে এ কথা জানিয়েছেন।

গত জানুয়ারি থেকে ইউনিয়ন ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। কিন্তু আলোচনায় অগ্রগতি নেই। ইউনিয়নের সর্বশেষ দাবি, সব সদস্যের জন্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি, কাজের ওপর ভিত্তি করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বোনাস প্রদান, ধর্মঘটের কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ এবং ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা দিবসে ছুটি ঘোষণা।

প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৫০ বছর কর্মীদের ইউনিয়নে যোগ দেওয়া বন্ধ করে রাখতে পেরেছিল স্যামসাং ইলেকট্রনিকস।

স্যামসাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা লি বাইউং-চুল প্রচণ্ডভাবে ইউনিয়নের বিপক্ষে ছিলেন।

স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের প্রথম কার্যকর শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে ওঠে ২০১৯ সালে। এক বছর পরেই স্যামসাংয়ের প্রতিষ্ঠাতার নাতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান লি জায়ে-ইয়ং কোম্পানির ‘কোনো ইউনিয়ন নয়’ নীতির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বলেছিলেন, স্যামসাংয়ের শ্রমনীতি ‘পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে’।

Link copied!