সহকারী পরিচালক থেকে যিনি হলেন জনপ্রিয় অভিনেতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৫:৪৮ পিএম

সহকারী পরিচালক থেকে যিনি হলেন জনপ্রিয় অভিনেতা

১৯৬১ সালে প্রথম সিনেমার জগতে পা রাখেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে নয়, সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু। তারপর চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেন। তখনও কি ভেবেছিলেন পরিচালনা বা চিত্রনাট্য লেখা নয়, সবার মনে জায়গা করে নেবেন তাঁর অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে!

ঢাকাই সিনেমা ও নাটকের কিংবদন্তী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। খলনায়ক, কমেডি, ভালো মানুষ, পুত্র থেকে পিতা সব চরিত্রেই নিজেকে দারুণভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি।

আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান যিনি পর্দায় এটিএম শামসুজ্জামান নামেই পরিচিত। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানা বাড়িতে জন্ম তাঁর। শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেন এলাকায়।

এটিএম শামসুজ্জামান পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। তারপর ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন তিনি।

বিনোদন জগতের সাথে কোনোরকম সংযোগ না থাকা পরিবারে বড় হয়েও নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন এই জগতে। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। সেখান থেকে শুরু হয় চিত্রনাট্যকার হিসেবে যাত্রা।

১৯৬৫ সালে নিজেকে অভিনেতা হিসেবে সবার সামনে নিয়ে আসেন এটিএম শামসুজ্জামান। শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। কৌতুকাভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘জলছবি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’ ইত্যাদি জনপ্রিয় সিনেমায়। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দর্শকদের মনে দারুণভাবে জায়গা করে নেন তিনি।

কৌতুক থেকে একটানে নিজেকে নিয়ে যান খলনায়কের ভূমিকায়। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ সিনেমার মাধ্যমে খল অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তাঁর। কৌতুক অভিনেতার থেকেও খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা বেশি হয় তাঁর। এতটাই ভালো অভিনয় করতেন যে সামনাসামনিও দর্শকরা তাঁকে চরিত্রের কারণে গালমন্দ করে বসতো। পেয়েছেন অনেক প্রশংসা। ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’ ও ‘চোরাবালি’ সিনেমাগুলোতে তাঁর খল অভিনয় ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

দীর্ঘ সিনেমা জগতের জীবনে সফল সিনেমাই তাঁর বেশি। নামগুলো পড়লেই সিনেমাগুলোর কথা মনে পড়তে বাধ্য। তার মধ্যে- ‘বড় বউ’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমনি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সুর্য দীঘল বাড়ি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘দায়ী কে?’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘দাদীমা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘গেরিলা’, ‘লাল টিপ’ ইত্যাদি।

অসাধারণ অভিনয়ের জন্য একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন। শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনবার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে একবার এবং আজীবন সম্মাননা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০১৫ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক লাভ করেন এই গুণী অভিনেতা।

শুধু সিনেমার জগতে নয়, এটিএম শামসুজ্জামান টিভি নাটকেও কাজ করেছেন সমানতালে। সেখানেও পেয়েছেন অসামান্য জনপ্রিয়তা। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় নাটকগুলো হচ্ছে- ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘শিলবাড়ি’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’, ‘শতবর্ষে দাদাজান’, ‘সেরা কিপ্টুস’, ‘নাপিত’, ‘গরু চোর’, ‘মুরুব্বি জামাই’, ‘আমার বউ বেশি বুঝে’, ‘পিতা পুত্র’, ‘সিন্দুকনামা’, ‘ওস্তাদজি’, ‘আক্কেল আলীর নির্বাচন’, ‘ইলু ইলু’, ‘শোধবোধ’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘তরিক আলী হাডারি’ ইত্যাদি।

চলচ্চিত্র ও নাটকে কাজের পাশাপাশি থেমে ছিল না চিত্রনাট্য লেখা ও পরিচালনার কাজ। তাঁর চিত্রনাট্যে প্রথম সিনেমা হচ্ছে ‘জলছবি’। এরপরও তিনি শতাধিক সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। পরিচালনা করেছিলেন সিনেমা ‘এবাদত’। এতে অভিনয় করেন রিয়াজ-শাবনূর জুটি।

অসাধারণ অভিনয়ের জন্য একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন। শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনবার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে একবার এবং আজীবন সম্মাননা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০১৫ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক লাভ করেন এই গুণী অভিনেতা।

ঢাকাই রঙিন দুনিয়ার এক নক্ষত্রের পতন হয়েছিল ২০২১ সালের এই দিনে। ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনয় জগতের অন্যতম সেরা ও বরেণ্য এই অভিনেতা।

এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুদিবসে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধা।

Link copied!