ঢালিউড অভিনেত্রী পরীমনির মুক্তির দাবিতে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ভার্চুয়াল প্রতিবাদে অনেকেই বলছেন, কেবল নারী হওয়ার কারণে পুরুষতান্ত্রিক প্রতিহিংসার স্বীকার পরীমনি। মামলা চলাকালীন মিডিয়া ট্রায়াল এবং মরাল পুলিশিংয়ের কারণে আগেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে পরীমনিকে যা একজন নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারকে হরণ করার শামিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রতিবাদে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন আইনজীবী, উন্নয়ন কর্মী, লেখক এবং নারী অধিকার কর্মীদের পাশাপাশি হালের জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীরাও। এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান. অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, আজমেরি হক বাঁধন, আজাদ আবুল কালামসহ আরও অনেকেই।
এবিষয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, 'খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনির হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমণিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সহকর্মী হিসেবে যতদূর জানি পরীমণি বাবা-মা হীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে পরীমণি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ’
তিনি আরও বলেন, ‘আরও দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমণি গ্রেফতারের পর তার প্রতি কোনো ধরণের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তে পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে!
সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?’
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা জি ২৪কে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভের সাথে মন্তব্য করেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন মহিলাকে টেনে এনে বিভিন্ন কিছু লেখালেখি হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের উপর পড়ছে। ইন্ডাস্ট্রিতেও এর খারাপ প্রভাব পড়বে। আশা রাখছি, সুষ্টু তদন্ত হোক, অকারণে যেন মেয়েটির কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়। পরীমণি যেন সঠিক বিচার পায়।’
এছাড়া অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন জি ২৪কে দেয়া প্রতিক্রিয়াতে দেশের অন্যান্য খুন, ধর্ষণ এবং চোর ডাকাতদের বিচারে আইনের নিষ্প্রভতা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি একজন মানুষ হিসাবে ভীষণ লজ্জিত, যে একজন নারীকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। একজন নারীকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। একবার ওর মানসিক অবস্থাটা ভাবুন! দিনের পর পর দিন তাকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তার পাশে কেউ থাকছে না। কী ভয়ঙ্কর! আমরা কী কুৎসিত। আমি ভাবতেও পারছি না। ও তো আমারই সহকর্মী, বাংলাদশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। ওর সঙ্গে যেটা হচ্ছে তাতে আমি লজ্জিত, এবং আতঙ্কিত। আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে এখানে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটাতে পারে। পরীর বিষয়ে কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবেও এই সংস্কৃতির শিকার।’
পরীমনির মুক্তির দাবীতে শনিবার প্রেসক্লাবের সামনে ‘জাস্টিস ফর পরীমনি’ শিরোনামে এক প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা আজাদ আবুল কালাম। সমাবেশে আজাদ আবুল কালাম বলেন, পরমিনি কি অন্যায় করেছে? সে কি ব্যাংক লুট করেছে? নাকি মানুষ হত্যা করেছে? শিল্পী হিসাবে তার যে নূন্যতম অধিকার, সেই অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ যখন তার বাড়িতে অভিযানে যায়, মনে হয় যেন জঙ্গি ধরতে যাচ্ছে। মনে হয় রাষ্ট্রের আর কোনও কাজ নেই। রাষ্ট্রের একটাই কাজ, একটাই সমস্যা হচ্ছে মডেল,অভিনেত্রী ও অ্যালকোহল। এটা ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনও সমস্যা নাই।
এসময় তিনি আরও বলেন,আমি মনে করি রাষ্ট্রের এই দুরভিসন্ধি শিল্পী সমাজকে এবং যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকে কলঙ্কিত করার একটি ষড়যন্ত্র।
দুই দফা রিমান্ডের পরও ঢাকার একটি আদালত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) অভিনেত্রী শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির জামিন নামঞ্জুর করেছে কারাগারে পাঠিয়েছেন। গত ৪ আগস্ট র্যাব পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে আটক করে। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে তার কয়েকজন সহযোগীদেরও আটক করা হয়।