ভিসা বাতিলের পরও অস্ট্রেলিয়ার আদালতের রায়ে দেশটিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষ টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। তবে দেশটির অভিবাসন মন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় আবারও তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সার্বিয়ান এই তারকা আপিলের সুযোগ পেলেও দেশটির আেইন অনুযায়ি ইতিবাচক কোনো ফল তিনি পাবেন না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।আসছে আদালতে শুনানির আগে আটক করা হয়েছে শীর্ষ এই টেনিস তারকাকে।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নেওয়ার আগেই জোকোভিচ ‘হুঁশিয়ারি’ করেছিলেন,সেখানে শিরোপা রক্ষার লড়াইয়ে যাচ্ছেন।জোকোভিচকে ঢুকতে না দেওয়ার চেষ্টার পর শনিবার আটক করা পর্যন্ত ঘটনার নেপথ্যে কী রয়েছে, তা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোকোভিচকে নিয়ে শুরু থেকে ‘বেকায়দায়’ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। আদালতের সিদ্ধান্তের পরও ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে’ দ্বিতীয়বার ভিসা বাতিল অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনী বছরে ভোটারদের সামনে সরকারের মুখ রক্ষার একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনে সরকার ভাবমূর্তি অর্জনে যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্কের পতন, বিব্রতকর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জোকোভিচের সমর্থকদের ক্রোধও সহ্য করতে প্রস্তুত। গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেডারেল সরকার একটি পয়েন্ট তৈরি করতে অনড় ছিল, তা হলো কেউই নিয়মের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি বিশ্বের এক নম্বর ব্যক্তিটিও নয়।
এটি একটি সহজ, সরল নীতি। কিন্তু যেভাবে তা মেনে চলা হয়েছে- তাতে কিন্তু কিছু একটা হয়েছে।
জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর আগে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছিলেন, মেলবোর্নে পৌঁছানোর সময় তার নথিপত্র ঠিক না থাকলে ‘তিনি পরবর্তী বিমানে বাড়ি যাবেন’। ‘নিয়ম নিয়মই’। ৬ জানুয়ারি যখন জোকোভিচের ভিসা বাতিল করা হয়, তখনও মরিসন একই কথা বলেন।
জোকোভিচ যখন এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তখন মরিসন বলেছিলেন,এটি নির্ভর করছে আদালতের ওপর। তবে আদালতে সরকারের অবস্থানকে নড়বড়ে দেখা গিয়েছিল। সরকার আদালতে আরও সময় চেয়েছিল, তবে সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন বিচারক। জোকোভিচকে কেন প্রথম স্থানে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়েছিল- তা নিয়েও তদন্তের মুখোমুখি করা হয়।
বিচারক অ্যান্টনি কেলি আদালতে জোকোভিচের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই পুরো ব্যাপারটা শেষ হয়ে যেতে পারত।
মেলবোর্ন বিমানবন্দরে জোকোভিচের ব্যাপারে যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল তা ‘অদক্ষ’ কাজ হিসেবে বলে উল্লেখ করে বিচারক তার ভিসা পুনর্বহাল এবং মুক্তির নির্দেশ দেন।কিন্তু তা হয়নি।
নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে পুনরায় তার ভিসা বাতিলের সুযোগ ছিল অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকের। আর শুক্রবার সেই কাজটি করেছেন তিনি।
অভিবাসনমন্ত্রীর এই প্রেরণার পেছনে অনেক কিছু বলা হয়েছ। মূলত এটি রাজনৈতিক এবং এটিই করা হয়। নোংরা রাজনীতি থেকে বের হওয়া অসম্ভব।
এখানে সরকারের সামনে দুটি বিষয় বিবেচনা করার আছে।
প্রথমত, মরিসন প্রশাসনকে গভীর বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার জনগণ এবং বিশ্বের কাছে মনে হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা নিয়ম করেছে তবে নিজেরাই তা বোঝে না বা তাদের কাছে বিষয়গুলো অস্পষ্ট। তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে না বলেও মনে হচ্ছে।
দ্বিতীয়টি হলো অস্ট্রেলিয়ার করোনা পরিস্থিতি। অস্ট্রেলিয়ার দুটি সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়ায় এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে কয়েক হাজার কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
ক্লিনিকগুলোতে কোভিড পরীক্ষা করতে মানুষের ভিড় বাড়ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার যদিও ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, তবে মহামারীর শুরুর পর দেশটিতে দীর্ঘ লকডাউন ও কঠোর বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে।
জোকোভিচের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তারিখ নিয়েও অসঙ্গতি রয়েছে। শুরুতে তিনি বলেন, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তিনি ১৭ ডিসেম্বর জেনেছেন। কিন্তু তিনি আদালতের হলফনামায় ১৬ ডিসেম্বর কোভিড পজিটিভ হওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা