দীর্ঘদিন ক্যানসারের সাথে লড়াই শেষে হার মানলেন ফুটবল মাঠের লড়াইয়ের রাজা পেলে। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই হলো নক্ষত্রের পতন। ব্রাজিল কিংবদন্তির মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শোকগ্রস্ত ফুটবল বিশ্বের তারকারা একে একে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নেইমারের মন খারাপ করা বার্তার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের তারকা ফুটবলাররাও লিখেছেন পেলেকে নিয়ে। নেইমারের পাশাপাশি পেলের মৃত্যু কাঁদিয়েছে লিওনেল মেসি-ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের।
পেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লেখেন, ‘সমস্ত ব্রাজিল এবং বিশেষ করে পেলের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। এই মুহূর্তে গোটা ফুটবলবিশ্ব যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে শুধু একটা শোকবার্তা যথেষ্ট নয়। রাজাকে শুধু বিদায় জানালে হবে না। কয়েক কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা পেলে। অতীতে তাঁকে নিয়ে কথা হয়েছে, বর্তমানে তাঁকে নিয়ে কথা হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। আমাকে যে ভালবাসা আপনি দিয়েছেন তা আমি চেষ্টা করেছি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে। সে আমরা যত দূরেই থাকি না কেন। কখনও তাঁকে ভোলা সম্ভব নয়। আমি এবং আমার মতো সব ফুটবল ভক্তের মধ্যে বেঁচে থাকবেন পেলে। শান্তিতে ঘুমাও রাজা।’
বহু অপেক্ষার পর সদ্য শেষ হওয়া কাতার বিশ্বকাপে ট্রফি ছুঁয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপ জয়ের পর হাসপাতাল থেকেই পেলে মেসিকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘বরাবরের মতো ফুটবল তার গল্প বলেই চলেছে। খুবই চিত্তাকর্ষকভাবে গল্প বলছে ফুটবল। মেসি প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতল। ওর ফুটবলের যা গতিপথ, তাতে এটা ওর প্রাপ্যই ছিল। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। দিয়েগো (ম্যারাডোনা) এখন নিশ্চয়ই হাসছে।’ পেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মেসি তাঁর ও পেলের ছবি শেয়ার করে লেখেন, ‘শান্তিতে বিশ্রাম নাও।’
ফুটবলের ইতিহাসে ২০ বছর বয়স হওয়ার আগে শুধু পেলে এবং এমবাপ্পেই বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিন্তু ২৪ বছর বয়স হওয়ার আগে দুটি বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি গড়েছেন শুধু পেলে। ইনস্টাগ্রামে পেলের সঙ্গে নিজের একটা ছবি পোস্ট করে এমবাপ্পে লিখেছেন, 'ফুটবলের রাজা বিদায় নিয়েছেন, তবে তাকে ভোলা যাবে না। শান্তির ঘুম ঘুমাও রাজা।'
ব্রাজিলিয়ান কাসেমিরো বলেছেন, 'শান্তিতে ঘুমান পেলে। ফুটবল এবং ব্রাজিলকে আপনি যে গৌরব এনে দিয়েছেন সে জন্য ধন্যবাদ। আপনার উত্তরাধিকার চিরন্তন।'
রাহিম স্টার্লিং লিখেন, 'শান্তিতে ঘুমান কিংবদন্তি'।
গ্যারি নেভিল লিখেছেন, 'কিংবদন্তি পেলে শান্তিতে ঘুমান। কি সুন্দর হাসি।'
২০২১ সাল থেকে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হন পেলে। কাতার বিশ্বকাপে গ্যালারিতে বসে নিজের দলের খেলা দেখার ইচ্ছা থাকলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ নভেম্বর তাঁকে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বিশ্বকাপ দেখেন ও দলকে মানসিক সাপোর্ট দিতে থাকেন। দল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলে মনোবল না হারানোর অনুপ্রেরণা জোগান।
গত ২২ ডিসেম্বর ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। বড়দিনে এ বছর হাসপাতালেই কাটান পেলে। বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি গণমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তাঁর কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে এডিসনও। গত কয়েকদিন ধরে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে তাঁর পাশেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবার প্রার্থনা ও চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চিরনিদ্রায় চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট।